২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



আসছে রোজা, বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম

তোফায়েল হোসেন জাকির, গাইবান্ধা || ০৪ মার্চ, ২০২৩, ০২:০৩ পিএম
আসছে রোজা, বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম


নদীবেষ্টিত জেলা গাইবান্ধায় নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন বেড়েই চলেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, সবজি, চাল-ডাল, ডিজেল-বিদ্যুৎ, মাছ-মাংস, বস্ত্র, ওষুধ, প্রসাধনীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এখন নাগালের বাইরে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তাদের দৈনন্দিন জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।  সামনে রোজা। ওই সময় নিত্যপণ্যের দাম যদি আরও বাড়ে, তাহলে সংসার চালাতেই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তকে হিমশিম খেতে হবে।    

সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা গেছে, দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির চিত্র।  ভোক্তারা জানান, বর্তমান বাজারে প্রতিকেজি চাল ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা, আটা ৬৫ টাকা, ব্রয়লার ২৪০, দেশি মুরগি ৬০০ টাকা, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা, ছাগলের মাংস ৯০০ টাকা, ছোলা ১৫০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা, ডাল ৯০ থেকে  ১৪০ টাকা, সয়াবিন ১৮৫ টাকা, ফল ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

এ ছাড়া শাক-সবজি, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, প্রসাধনী, বস্ত্র, দুধসহ সব প্রকার পণ্যের দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থাৎ জীবন ধারণের উপযোগী প্রতিটি পণ্য অগ্নিমূল্য। 

একাধিক ভোক্তা জানান, একটি পরিবারের জীবন-জীবিকার গতি নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রতিটি পণ্যের দাম যখন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, তখন মানুষের জীবন কাটে স্বস্তিতে। আর যদি দাম ঊর্ধ্বগতি থাকে, তখন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বেড়ে যায় অশান্তি। বিশেষ করে খেতমজুর কিংবা দিন আনে দিন খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।

ছইমন বেওয়া নামের একজন বৃদ্ধা বলেন, ‘এক সময়ে রিকশাচালক ছেলের হাড়িতে খেয়ে কোনোমতে জীবন পার করতাম। এখন সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ছেলেটা তেমন সংসার চালাতে পারছে না। তাই আমি ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছি।’

খবির উদ্দিন নামের এক ক্ষেতমজুর বলেন, ‘আমার ৬ সদস্যের সংসার। বর্তমানে যেভাবে জিনিপত্রের দাম বেড়েছে, সেভাবে আয় বাড়েনি। এর আগে করোনা ধকল না সামলাতেই এখন জিনিপত্রের বেসামাল দামে দিনে দিনে সংসারে ঋণের বোঝা ভারী হচ্ছে।’ 

কৃষক আজগর আলী জানান, ধানসহ অন্যান্য কৃষি ফসল উৎপাদনে পরিবারের মৌলিক চাহিদাপূরণ করে আসছিলেন। এরই মধ্যে কৃষিপণ্যসহ সার-কীটনাশক, বিদ্যুৎ-ডিজেলের অস্বাভাবিক দামের কারণে চরম হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। 

আজাদুল ইসলাম নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক বলেন, ‘ইদানিং সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এখন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ না পারছে অধিক দামে জিনিস কিনতে, না পারছে কারও কাছে হাত পাততে। এই অস্থিতিশীল অবস্থা নিরসনে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’ 

সমাজসেবক শহিদুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘আগের তুলনায় মানুষের আয় বেড়েছে। কিন্তু জীবনযাত্রায় ব্যয়ও বেড়েছে অনেকটাই। তাই গ্রামীণ পর্যায়ে সহজ শর্তে ঋণদানসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।’ 

স্থানীয় মাদরাসা সুপার মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আসন্ন পবিত্র রমজান মাস নাজাতের মাস হলেও এবার আতঙ্কে কাটবে মনে হচ্ছে মাসটি। উচ্চমূল্যে খাদ্যপণ্য কিনে রোজা করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।’ 

নিত্যপণ্যসামগ্রী বিক্রেতা নরেশ সাহা, রাজা, সুজন, রফিকুলসহ আরও অনেকে বলেন, ‘ক্রমান্বয়ে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিও কমেছে। এমনকি দাম নিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি বাঁধছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে।’ 

গাইবান্ধা জাতীয় ভোক্তা অধিকার রংক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুস সালাম বলেন, ‘বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে নজরদারি রাখা হয়েছে। এ নিয়ে অভিযানও চালানো হচ্ছে।’

 ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন