২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার



ক্যাম্পাস
প্রিন্ট

শাটারে গল্প খোঁজেন তারা

শাফি মাহবুব, নোবিপ্রবি || ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ১১:০২ এএম
শাটারে গল্প খোঁজেন তারা


সারাক্ষণ ছুটে চলা। এতটুকু ফুসরত নেই। যেখানেই ঘটনা, সেখানেই ছুটে চলা। তবে স্বাধীনতা অফুরান। তারা কেউ ফটোসাংবাদিক নন। কেবলই শখের ফটোগ্রাফার। তাদের কেউ আসেন শখে, আবার কেউ নেশায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও তাদের কাজ কম নয়। মাঝেমধ্যে প্রাণের মায়া ছেড়ে ক্লিক করতে হয় ক্যামেরায়। ক্যাম্পাসের সংঘাত-সংকটে তারাও থাকেন। 

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফটোসাংবাদিকদের পাশাপাশি তারা একটা জায়গা করে নিয়েছেন। তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ছবি তোলার মাধ্যমে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে উপস্থাপন করেন দেশ-বিদেশে। অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায়। কুড়িয়ে আনেন সম্মান। 

বর্তমান সময়ে ক্যাম্পাস ফটোগ্রাফারদের দিনকাল কেমন যাচ্ছে, কী ধরনের ছবি তুলতে পছন্দ করেন তারা, ফটোগ্রাফিতে তাদের প্রাপ্তিই বা কী, তাদের ছবি নিয়ে পরিকল্পনা কী আগামীতে এবং নতুন যারা ফটোগ্রাফিতে আসতে চান তাদের উদ্দেশ্যেই বা কী বলতে চান তারা। সমসাময়িক এসব বিষয় নিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ক্যাম্পাস ফটোগ্রাফারদের সঙ্গে কথা বলেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক শাফি মাহবুব।  

আদনান রনি, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

আদনান প্রকৃতি এবং মানুষের লাইফস্টাইলের ছবি তুলতে পছন্দ করেন। এ ছাড়াও বিয়ের মৌসুমে ওয়েডিং ফটোগ্রাফিও করে থাকেন। তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে মিশতে স্বাধীনতা পেয়েছি। ভবিষ্যতেও ফটোগ্রাফি নিয়েই থাকতে চাই। বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্য সবার সামনে তুলে ধরতে চাই। বর্তমানে সারাদেশে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি করে বেড়ানো সংগঠন ‘পালকি’ গঠিত হয়েছে আমাদের এই নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাব থেকেই। 

আমি বর্তমানে এই ক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত। নতুনদের জন্য আমাদের ক্লাবের দরজা সবসময় খোলা। আমাদের ক্লাবের উদ্দেশ্য হলো ক্যাম্পাসের সব ফটোগ্রাফারকে একটা প্ল্যাটফর্মে এনে নিজেদের ফটোগ্রাফিক আইডিয়া একে-অপরের সঙ্গে শেয়ার করা এবং ক্যাম্পাসকে সারাদেশের কাছে রিপ্রেজেন্ট করা।

তারান্নুম রিনতু, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ

ফটোগ্রাফির জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সৃজনশীল দৃষ্টি এবং এই কাজের প্রতি ভালোবাসা। ফোন দিয়েই ফটোগ্রাফি চর্চা শুরু করা সম্ভব। তবে ফ্রেমিং, 

গ্রিডলাইন, কম্পোজিশন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাব ক্যাম্পাসের অন্যতম সুন্দর একটা সংগঠন। ক্লাবের মেম্বারদের তোলা ছবি দেশের বিভিন্ন ইভেন্ট,এক্সিবিশনে যাচ্ছে, এতে ক্যাম্পাসের সুনামও বৃদ্ধি হচ্ছে, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। ক্লাব নতুনদের ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী করছে এবং শেখাচ্ছে।

আবেদীন, ফার্মেসি বিভাগ

আমার ক্ষেত্রে যেহেতু আমি এখনো নতুন, তাই নতুন নতুন জিনিস শেখার মাঝ দিয়েই যাচ্ছে। আমি সাধারণত পোট্রের্ট ছবিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে আমার ইচ্ছা আছে ন্যাচার আর স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে নজর দেওয়ার। তাই এখন পোট্রের্টকে স্ট্রিটের সঙ্গে কম্বাইন করে কিছু করার চেষ্টা করছি। ফটোগ্রাফি যেহেতু প্যাশন থেকে এসেছে, তাই এর বিনিময়ে প্রাপ্তি বলতে সব তো পথচলা। তবে ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে পদযাত্রা হয়েছে। দেখা যাক কতটুকু করতে পারি। 

পারভেজ খান জয়, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ

ক্যাম্পাসে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ফটোগ্রাফি জিনিসটা একপ্রকার শখ থেকেই করা, তাই যখনই সময়-সুযোগ পাই, ছবি তুলতে বের হয়ে যাই। সব ধরণের ছবি তুলতেই ভালো লাগে, তবে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি 'ল্যান্ডস্কেপ', 'স্ট্রিট' এবং 'লাইফস্টাইল' ক্যাটাগরির ছবি তুলতে। সবসময় চেষ্টা করি প্রত্যেকটা ছবির মাধ্যমে একটা নতুন গল্প তুলে ধরতে। নতুন যারা ফটোগ্রাফি নিয়ে চর্চা করতে চান, তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ছবি তোলার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ফটোগ্রাফির বেসিক এবং কম্পোজিশন জেনে সেগুলো নিয়ে নিয়মিত চর্চা করে যেতে হবে। পরিশেষে, একজন ভালো ফটোগ্রাফার হওয়ার আগে নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

ইসমাইল তৌহিদ, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ

আমি মূলত নেচার, লাইফস্টাইল, ল্যান্ডস্কেপ ছবি তুলতে বেশি পছন্দ করি। এর বাইরে প্রফেশন হিসেবে আমাদের পালকি ওয়েডিং টিমে সিনিয়র ফটোগ্রাফার হিসেবে আছি। ফটোগ্রাফি আমাকে অনেক ফ্রেমে বন্দি সুন্দর মুহূর্ত দিয়েছে।আমার কাছে আমার প্রতিটি ছবি জীবন্ত। যখনই কোনো ছবির দিকে তাকাই, তখন আমি ওই সময়টাতে ফিরে যেতে পারি, ফিল করতে পারি। এই অনুভূতিটা সুন্দর, প্রাণবন্ত। 

আমিনুল ইসলাম বুলবুল, শিক্ষা বিভাগ 

ক্যামেরাই একজন ফটোগ্রাফারের তৃতীয় নয়ন। প্রকৃতি, সবুজের স্নিগ্ধতা, আকাশের শুভ্রতা এসব কিছুই এক অন্য আঙ্গিকে তুলে ধরাই ফটোগ্রাফি। আজকাল মুঠোফোন অনেক সহজলভ্য। আর এখন কমবেশি সবাই মোবাইলে ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ করে। ছবি তুলতে ভালোবাসে না এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যায়। মূলত শখের বসেই আমার ছবি তোলা হয়, অনেক ভালো লাগে ছবি তুলতে। ফটোগ্রাফি নিয়ে আরও অনেক কিছু শেখা বাকি। একটা ভালো কিছু ক্যামেরাবন্দি করতে পারলে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। ক্যাম্পাসের সিনিয়র ফটোগ্রাফাররা আমার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকেন সবসময়।

মারুফ মিরাজ, শিক্ষা বিভাগ

প্রথমেই বলি আমি খুব ভালো ফটোগ্রাফার নই। এখানে কথা বলার মতো অনেক যোগ্যতাই আমার নেই। এখনো শেখার চেষ্টায় আছি। তবে আমাদের ক্যাম্পাসে অনেক ভালো ও গুণী ফটোগ্রাফার আছেন, তাদের তুলনায় আমি অতি নগণ্য। তাদের কাজ দেখে কিংবা অনুপ্রেরণায় প্রতিদিন একটু একটু করে শিখে চলেছি নতুন কিছু। ফটোগ্রাফি ব্যাপারটা মূলত শখ থেকেই। এই কাজটায় কখনো বিরক্তি আসে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে কখনো অসহ্য লাগে না। এই ক্যাম্পাসের ফটোগ্রাফাররা অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। অনেকের আলাদা টিম আছে, যারা প্রফেশনালি কাজ করেন। আমি এই লাইনে প্রফেশনালি কাজ করি বা না করি কিংবা যেই পেশাতেই থাকি না কেন, এটা চালিয়ে যেতে চাই নিজের প্যাশন থেকেই।

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন