বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নেগেটিভ পর্যায়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব মো. মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টরে কিছু অস্থিরতা আছে। যে কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করছেন। বিভিন্ন কোম্পানির ট্রেডিং কমে গেছে। বিনিয়োগকারীরা মার্কেটের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছেন। বোঝার চেষ্টা করছেন ব্যাংক খাতের সামগ্রিক চিত্র। তাদের পর্যবেক্ষণ শেষ হলে মার্কেটে বিনিয়োগ করবেন। তখন ব্যাংকিং খাতেও বিনিয়োগ বাড়বে।’ সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে তার কার্যালয়ে ঢাকা বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
মো. মনজুর হোসেন বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংক ফান্ডামেন্টাল হওয়ার পরও তাদের শেয়ার দর কমে গেছে। মূলত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনীহার কারণে এমন চিত্র ফুটে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক। আমাদের ব্যাংকের ফান্ডামেন্টাল নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ফিন্যান্সিয়াল স্ট্রেংগ্থ অনেক ভালো। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ১৪ টাকার ওপরে আছে। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) যথেষ্ট ভালো। তারপরও আমাদের শেয়ার দর ফেসভ্যালু (১০ টাকা)-এর নিচে। মূলত সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের প্রভাব আমাদের ব্যাংকের শেয়ার দরেও পড়েছে। সামগ্রিক শেয়ারমার্কেটের জন্য এটা ভালো নয়।’
মনজুর হোসেন বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চেষ্টা করছেন বর্তমান মার্কেটকে ভাইব্রেন্ট করার জন্য। যেকোনো কারণে তাদের এই চেষ্টা সাফল্যের মুখ দেখছে না। আমি বিশ্বাস করি ওভার দ্য পিরিয়ড, মার্কেট ঠিক হয়ে যাবে।’
ব্যাংকে বিনিয়োগ সম্পর্কে কোম্পানি সচিব বলেন, ‘ব্যাংকে বিনিয়োগ করলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। কিন্তু কেউ যদি কোনো সমিতিতে বিনিয়োগ করে, সেখানে প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্টটা লস হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। ব্যাংকে সেই সুযোগটা নেই। আইনি বিধির কারণে ব্যাংকের ক্ষেত্রে সেই কাভারেজটা দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য রেগুলেটর থেকেও সেই কাভারেজটা দেওয়া হয়েছে একজন আমানতকারীকে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জায়গা থেকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করার সুযোগ নেই। ইস্যুয়ার কোম্পানিগুলোর মার্কেটকে ম্যানুপুলেট করারও সুযোগ নেই। আমার কথার ওপর ভিত্তি করে হয়তো অনেকেই ব্যাংকিং সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারেন। আবার নাও করতে পারেন। এটা তাঁদের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়।’
ইনিশিয়াল পাবলিক অফারিং(আইপিও)-এর মাধ্যমে মার্কেট থেকে তোলা প্রসঙ্গে মনজুর হোসেন বলেন, ‘রেগুলেটরি কমপ্ল্যান্সের কারণে মার্কেট থেকে আমাদের ৪২৫ কোটি টাকা তুলতে হয়েছে। সেই টাকা আমরা যেসব খাতে বিনিয়োগ করবো, সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। দুই বছরের মধ্যে আমরা এই টাকা কাজে লাগাবো। এখনই মার্কেটে বিনিয়োগের সঠিক সময়। অলরেডি শেয়ার মার্কেটে কিছু বিনিয়োগ আমাদের আছে। যেটা আমরা তুলিনি।’
গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক সম্পর্কে এই ব্যাংকার বলেন, ‘‘চতুর্থ প্রজন্মের যত ব্যাংক আছে, সেগুলোর মধ্যে আমরাই সবচেয়ে বেশি শাখা বাড়িয়েছি। প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছানোর জন্য যত রকম চেষ্টা করা দরকার, আমরা সেটা করে যাচ্ছি। ২০২৩ সালেও আমাদের ব্যাংকের অনেকগুলো শাখা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। রেগুলেটরদের পারমিশন পেলে শুরু করে দেবো। আমরা নতুন একটা প্রডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি ইতোমধ্যে। প্রডাক্টির নাম ‘এহসান’। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, তারা ১০ টাকা থেকে শুরু করে যত বেশি ইচ্ছে আমাদের ব্যাংকে ডিপোজিট করতে পারবেন। কমপক্ষে ৫০০ টাকা দিয়ে কেউ ‘এহসান’ অ্যাকাউন্ট খুললে তার পরিবারের কোনো সদস্যকে বিনামূল্যে একটি ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হবে। এমনকি তাদের প্রাথমিক চেক বইয়ের পাতাও বিনামূল্যে দেওয়া হবে। আমাদের টার্গেট আছে, একমাসের মধ্যে এই ধরনের আমরা ১ লাখ ব্যাংক হিসাব খুলবো।’’
ব্যাংকের সামাজিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মনজুর হোসেন বলেন, ‘আমাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে সামাজিক বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে কত টাকা ব্যয় করে থাকি, তা দেওয়া থাকে। সিএসআর খাতে আমরা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অনুদানগুলো দিয়ে থাকি। শীত মৌসুমে আমরা দুঃস্থ মানুষদের ব্যাংকের শাখাগুলোর মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণ করি। রমজানে প্রান্তিক দুঃস্থদের জন্য উপহার দেই।’
এই ব্যাংকার আরও বলেন, ‘আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের ব্যাংককে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেন অন্যরা আমাদের অনুসরণ-অনুকরণ করে। সারাদেশের জনগণের দোরগোড়ায় ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, চালিয়ে যাবো।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/