ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পার হওয়ার পরও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সদরে কোনো শহীদ মিনার তৈরি করা হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের স্মরণ করতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে হয় স্মৃতিসৌধে। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষে দাবি, শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে পারেন না তারা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদরে শহীদ মিনার নেই। তবে একটি স্মৃতিসৌধ আছে। তাতেই উপজেলা সদরের কাছের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান খেলু বলেন, ‘ভাষাশহীদের সম্মান জানাতে ও আগামী প্রজন্মের কাছে ভাষাশহীদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন।’
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২১ মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২ কলেজ ও ৬ মাদ্রাসা রয়েছে। কোনো মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি।
তবে ১৫ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। অবশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজও শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। এর মধ্যে বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা, বীরেন্দ্রনগর, ট্যাকেরঘাট, বালিজুরী, আনোয়ারপুরসহ যেসব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে, সেগুলো সারাবছর জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকে। শুধু বিশেষ দিনগুলোতে পরিষ্কার করে সাজানো হয়।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহান মিয়া বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে পারি না।’
সদরের বাসিন্দা করিম বলেন, ‘শহীদ মিনার বাঙালির ভেতরে চেতনা জাগায়। এখন আমাদের শিক্ষাঙ্গনে তো নাই, সদরেও নাই।’
তাহিরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, সেগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বলা হয়েছে।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ‘ভাষাশহীদদের সম্মানে শহীদ মিনার স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ভাষাশহীদের কথা তুলে ধরতে ও সম্মান জানাতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপন করা খুবই প্রয়োজন। এই বিষয়ে দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলবো।’
ঢাকা বিজনেস/এম