২৬ জুন ২০২৪, বুধবার



হিলিতে জীবন্ত গাছে পেরেক মেরে প্রচারণা

আনোয়ার হোসেন বুলু, হিলি (দিনাজপুর) || ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০১:৩২ পিএম
হিলিতে জীবন্ত গাছে পেরেক মেরে প্রচারণা


দিনাজপুরের হিলির মোড়গুলোতে জীবন্ত গাছে পেরেক (লোহার কাটা) ঠুকে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। এতে গাছের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, হিলির গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোর ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির গাছে ঝুলে আছে স্কুলে ভর্তি, হারবাল কোম্পানির বিজ্ঞাপন, চিকিৎসকের প্রচার সংক্রান্ত প্রচারপত্রের পোস্টার-ফেস্টুন। দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এসব পোস্টার-ফেস্টুন সাঁটানো হলেও কারো কোনো প্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রশাসন বলছে, পেরেক ঠুকে পোস্টার মারার বিরুদ্ধে অচিরেই অভিযান চালনো হবে।  

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হিলির মোড়গুলোতে জীবন্ত গাছে পেরেক (লোহার কাটা) ঠুকে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। এতে গাছের ক্ষতি হচ্ছে। অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।  

হিলি নাগরিক কিমিটির প্রচার সম্পাদক মো. এনামুল হক খান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি হিলি বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন মোড়ে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছে সাঁটানো হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানি, স্কুল বা এলাকাবাসীকে বিভিন্ন দিবসে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যক্তিগত পোস্টার-ফেস্টুন। আর এসব পোস্টার সাঁটাতে ব্যবহার করা হচ্ছে লোহার তৈরি কাঁটা বা পেরেক। এতে গাছের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।’ 

হাকিমপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মোছা, কামরুন নাহার বলেন, ‘গাছেরও মানুষের মতো প্রাণ আছে। মানুষকে আঘাত করলে যেমন ক্ষতের সৃষ্টি হয়, আঘাত পায়, গাছও তেমন আঘাত পায়, শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। গাছে পেরেক (লোহার কাঁটা) মেরে পোস্টার-ফেস্টুন সাঁটানো হলে গাছে ছিদ্র হয়। ওই ছিদ্র দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক ও অণুজীব গাছে প্রবেশ করে। গাছের পরিবহন সিস্টেম দুটি একটি হলো জাইলেম আরেকটি হলো ফ্লোয়েম। পানির সঙ্গে দ্রবীভূত হলে খনিজ লবণও জাইলেম টিস্যুর মাধ্যমে গাছের উপরের দিকে পানি প্রবাহিত হয়। যদি গাছে পেরেক মারা হয়, তাহলে ফ্লোয়েম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গাছ পুষ্টি সংকটে ভোগে।’ 

কামরুন নাহার বলেন, ‘ছোট গাছে পেরেক ঢুকিয়ে বা যেকোনোভাবে আঘাত করলে অকালে ফুল ফোটে। গাছ মনে করে তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই ছোট গাছগুলো অকালে বা অপরিপক্ক বয়সে ফুল ছেড়ে বংশ রেখে যাবার চেষ্টা করে। তাই কোনো গাছে পেরেক মারা বা আঘাত করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে সবারই সচেতন হওয়া উচিত।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় মোট জনসংখ্যার ২৫ ভাগ গাছ বা বনভূমি থাকার দরকার। কিন্তু হিলিতে তা নেই। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পুরনো গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা এবং নতুন করে গাছ রোপণ করা উচিত।’ 

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ-আলম ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘যোকোন স্থানে বিজ্ঞাপন লাগাতে গেলে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নিতে হয়। তবে গাছে পেরেক ঠুকে পোস্টার মারার বিষয়টির বিরুদ্ধে অচিরেই অভিযান চালনো হবে।’ 

ঢাকা বিজনেস/এম



আরো পড়ুন