২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



ক্যাম্পাস
প্রিন্ট

‘পরিযায়ী পাখিশূন্য’ জাবিতে পাখিমেলা

জাবি সংবাদদাতা || ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০৮:০২ পিএম
‘পরিযায়ী পাখিশূন্য’ জাবিতে পাখিমেলা


পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা আয়োজনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘পাখি মেলা-২০২৩’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্যাম্পাসের লেকগুলো পাখিশূন্য হলেও মেলা দেখতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে পরিযায়ী পাখি দেখতে ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন। তবে অতিথি পাখির কিচিরমিচির, খুনসুটি আর ওড়াউড়ি দেখতে না পেরে হতাশা ব্যক্ত করেছেন দর্শনার্থীরা।

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে বেলুন উড়িয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম এ মেলার উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা পাখি যে লেকগুলোতে বসে আমরা সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি। কিন্তু এখন কাঁটাতারের বেড়া নেই বললেই চলে। এগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে, ভেঙে ফেলা হয়েছে। কেন এত কাছে গিয়ে পাখি দেখতে হবে? একটু দূরে থেকেও তো পাখিগুলো দেখা যায়। কিন্তু আমরা এই নিয়মগুলো মানি না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা পাখিদের বিরক্ত করি। রাতের বেলা অনুষ্ঠান করতে না করার পরেও অনেকে করছেন। এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের আতশবাজিও ফুটানো হয়। ফলে পাখি ভয়ে এই এলাকাটা ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারে পাখি আছে। আপনাদের সেখানে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। সেখানে গেলে সেখানকার পাখিগুলোও চলে যাবে। তখন জাহাঙ্গীরনগর পুরাই পাখিশূন্য হয়ে যাবে। সেটা আমাদের জন্য হবে কষ্টদায়ক এবং পীড়াদায়ক।’

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে মেলায় ঘুরতে আসেন তিন বন্ধু। তারা বলেন, ‘আগে একবার পাখি মেলায় এসেছিলাম। তখন লেকগুলোতে অনেক পরিযায়ী পাখি দেখেছি। কি সুন্দর করে পাখিরা ‍উড়তো, কিচিরমিচির ডাকতো। কিন্তু এবার কোনো পাখি দেখতে পারি নাই, খুব খারাপ লাগছে।’

এদিকে ‘পাখপাখালি দেশের রত্ম, আসুন সবাই করি যত্ম’- প্রতিপাদ্যে দিনব্যাপী মেলায় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপ ও বাইনোকুলার দিয়ে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্রপত্রিকা প্রদর্শনী, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা এবং সবার জন্য উন্মুক্ত পাখিবিষয়ক কুইজের আয়োজন করা হয়।

এছাড়া মেলায় পাখি সংরক্ষণে অবদান রাখায় সাঈদ হোসাইন, শাওন দেব এবং এএসএম আরিফ উল আনামকে ‘বিগ বার্ড বাংলাদেশ’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে অধ্যাপক এএনএম আমিনুর রহমান, অনলাইন ক্যাটাগরিতে হৃদয় দেবনাথ এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া ক্যাটাগরিতে কেফায়েত উল্লাহ চেীধুরীকে ‘কনজারভেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। এদিকে অর্ণব সাহা ও তার দলকে সায়েন্টিফিক পাবলিকেশ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

মেলার আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মো. নুহু আলম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, বিশিষ্ট পাখিবিশারদ ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু এবং বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রেজাউল করিম প্রমুখ।

এর আগে, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি জলাশয়ে পাখি আসলেও এখন শুধু একটি জলাশয়ে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের জলাশয়টি সাধারণের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত বলে সেখানে পরিযায়ী পাখি আছে। ক্যাম্পাসে দর্শনার্থীর চাপ বাড়ায় ও বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের উৎপাতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছেন পাখি বিশেষজ্ঞরা।

উজ্জল/এম



আরো পড়ুন