ওজন বেড়ে গেলে সবাই চিন্তায় পড়ে যান। অনাকাঙ্ক্ষিত বেড়ে যাওয়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। কম-বেশি সবারই জানা আছে, ওজন বেশি থাকলে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। এ কারণে ওজন কমানোর জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়।
স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিকাংশ মানুষই সকালের নাশতা এড়িয়ে চলেন। খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে আনাসহ খাদ্যতালিকায়ও অনেক পরিবর্তন আনেন। তাদের যুক্তি, সকালের খাবার খাওয়া যাবে না এবং অন্যান্য বেলায় খুবই কম পরিমাণ খেতে হবে। এতেই নাকি স্বাস্থ্য কমবে। আর এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বিষয়টি নিয়ে যখন নানা প্রশ্ন, তখন এ ব্যাপারে ভারতীয় একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদার। এবার তাহলে এই পুষ্টিবিদের পরামর্শ জেনে নেয়া যাক।
নাশতা না করলে কি ওজন কমে: অনেকেই ওজন কমাতে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ কারণে শর্টকাট উপায় হিসেবে নাশতা করা বন্ধ করে দেন। আর এই ভুলের কারণেই ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে না। কেননা, সকালে নাশতা না করার কারণে শরীরে বিপাকের হার ধীরগতি হয়। এতে ওজন যে পরিমাণ ছিল, সেখানেই থাকে। তাই স্বাস্থ্য কমিয়ে আনার জন্য অবশ্যই নাশতা করতে হবে। তা না হলে ছোট ছোট বিভিন্ন অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা হবে।
পিছু ছাড়বে না ক্লান্তি: রাতে খাবার খাওয়ার পর অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার ঘুম হয়। এরপর সকালে উঠে যদি নাশতা না করা হয় তাহলে শরীর প্রয়োজনীয় শক্তি পাবে না। এ জন্য দিনের বাকি সময় ক্লান্ত থাকে শরীর। এ অবস্থায় কোনো কাজে মন বসে না। আবার এই অভ্যাস দীর্ঘদিন চলতে থাকলে পুষ্টির ঘাটতিও দেখা দেয়। এ জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নাশতা করা উচিত।
পেটের সমস্যা বাড়ে: সকালে নাশতা না করলে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই পেটের সমস্যা আছে তাদের এই সমস্যা আরও বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আবার দীর্ঘদিন ধরে সকালে নাশতা না করলে পাকস্থলীর লাইনিংয়ে ক্ষত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এটি হচ্ছে স্টমাক আলসার। এ জন্য রোগ থেকে রক্ষা চাইলে নিয়মিত নাশতা করতে হবে।
ট্রাইগ্লিসারাইডসের ঝুঁকি: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের নাশতা না করলে রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডস লেভেল বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। এ থেকে হার্টের অসুখ ও ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যা হতে পারে। আবার ডায়াবেটিস রোগীরা যদি নাশতা না করেন, তাহলে হঠাৎ করেই সুগার ফল হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এ জন্য সকালের নাশতা বন্ধ করা ঠিক নয়।
নাশতায় কী খাবেন: ওজন কমাতে চাইলে সকালের নাশতায় আটার রুটি, ওটস বা ডালিয়ায় ভরসা রাখতে পারেন। এ সময় শাক-সবজি রাখতে পারেন। আবার ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, সোয়াবিন ও পনিরের মতো যেকোনো একটি প্রোটিন রিচ খাবার রাখুন। একইসঙ্গে পাউরুটি, মিষ্টি, ঘি, মাখন এড়িয়ে চলুন।
ব্যায়াম: ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দিনে অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা প্রয়োজন। এ জন্য জিমে যেতে পারলে ভালো। তবে চাইলে বাড়িতেও ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। আবার ব্যায়ামে যদি আগ্রহ না থাকে, তাহলে প্রতিদিন ঘাম ঝরিয়ে ৩০ মিনিটের মতো হাঁটতে পারেন। এতেও মেদ ঝরবে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত। আর কখনো কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।