২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু আজ

মোহাম্মদ তারেকুজ্জামান || ২১ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৪:৩১ এএম
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা  শুরু আজ


রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে প্রতি বছরের মতো এবারও রাজধানীতে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। পূর্বাচল নতুন শহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে সকাল সাড়ে ১০টায় এই মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

শনিবার  দিনভর মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, প্যাভিলিন, স্টলগুলোয় উদ্বোধনীর জন্য সাজসাজ  প্রস্তুতি চলছে। কাঠ, হাতুরিসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ঠুকঠাক শব্দে নির্মিত হচ্ছে বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন, স্টল। 

আয়োজকরা জানান, বাণিজ্যমেলার অধিকাংশ প্যাভিলিয়ন, স্টল বরাদ্দ হয়েছে। মেলায় থাকছে ভিসতা ইলেক্ট্রনিক্স লিমিডেটসহ দেশি  ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড  ইলেক্ট্রনিক্স, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, গৃহসামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিও্যার, খেলনা, স্টশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টায়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য। এবারের বাণিজ্যমেলার লে-আউট প্ল্যান (সংশোধিত) অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৫১টি প্যাভিলিয়ন, রেস্টুরেন্ট, স্টল বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৫১ প্যাভিলিয়ন রেস্টুরেন্ট ও স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

মেলায় মালয়শিয়া, ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। 

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের ২টি (হল-এ ও হল-বি) হলে ১৭৪ স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেন্টারের মেইন গেটের পূর্বপাশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংক্ষিত ক্যাটাগরির মোট ৬২ স্টল রয়েছে। হল দুটির পেছনে বিদেশি ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন এবং প্রিমিয়ার ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ  মোট ৫৩ স্টল রয়েছে। সেন্টারের মূল কম্পাউন্ডের বাইরে ৬ একর জমির একাংশে ফুড জোনে ৩২টি রেস্টুরেন্ট ও মিনি রেস্টুরেন্ট রয়েছে।  সাধারণ ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে ৬২টি। অন্যান্য বারের মতো এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়নের ভেতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন ছাড়াও জাতির পিতা সম্পর্কিত পুস্তকাদি এবং তার জীবন ও কর্মভিত্তিক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

মেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে শনিবার থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনী নিয়োজিত করা হয়েছে। বাহিনীর সদস্যরা তাদের কার্যক্রম বুঝে নিচ্ছেন । মাসব্যাপী এই মেলায় পুলিশ, র‌্যাব মেলা প্রাঙ্গণে ও বাইরে নিয়মিত টহল দেবে। এছাড়া সার্ভিস গেইট ও ভিআইপি গেইটের শৃঙ্খলা বজার রাখার জন্য প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করা হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেইট, পার্কিং এরিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। মেলার প্রবেশ গেইটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে ফায়ার ব্রিগেড। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


পর্যাপ্ত সংক্ষক পরিচ্ছন্নতাকর্মী সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এক্সিবিশন সেন্টারে পর্যাপ্ত সংখ্যক নারী-পুরুষের জন্য আলাদা  টয়লেট রয়েছে; যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণের বাইরেও পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেট তৈরি করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখার জন্য শতাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে।

খাদ্যদ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পৃথক বুথ রাখা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যসহ গঠিত টিম মেলা চলার সময় ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হবে। মেলার এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে ৫০০ আসনবিশিষ্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে; যেখানে দর্শনার্থীরা খাবার খেতে পারবেন। মেলায় রয়েছে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। মেলায় সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী সচিবালয়। স্থাপন করা করা হয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র। ডাচ বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের বুথ বসানো হয়েছে। মেলায় থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের সার্ভিস বুথ। মা ও শিশুদের কথা চিন্তা করে মেলায় বসানো হয়েছে মা ও শিশুকেন্দ্র। মেলায় রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, মসজিদ, নিউট্রিশন অ্যান্ড অটিজম সেবা, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জনয় আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার, বেঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৫০টি বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে; যেগুলো কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত চলাচল করবে। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য মেলায় প্রবেশ মূল্য ধরা হয়েছে ৫০ টাকা। ৫ বছর থেকে ১২ বছরের নিচে শিশুদের জন্য টিকেটের মূল্য ধরা হয়েছে ২৫ টাকা। প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধারা কার্ড দেখালে বিনামূল্যে মেলায় প্রবশ করতে পারবেন। মেলার টিকিট অন-লাইনেও পাওয়া যাবে। বিকাশের মাধ্যমে টিকিট কাটলে ডিসকাউন্ট দেবে মেলা কর্তৃপক্ষ।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর তথ্য কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্রায় সব প্যাভিলিয়ন, স্টল বরাদ্দ হয়েছে। আশা করি, মেলা জাজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।’

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘মেলার প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের মেলায় কত টাকা রাজস্ব আহরণ হবে, তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। মেলা শেষ হলে বোঝা যাবে।’

উল্লেখ্য মেলার আয়োজক হিসেবে রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।



আরো পড়ুন