ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার (৪ অক্টোবর) সকাল ছয়টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কিন্তু বিকেল ৪টায় বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) থেকে বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাউবির কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বুধবার বিকেল চারটায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে সকাল ছয়টা থেকে নয়টা পর্যন্ত বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় কিছুটা বেড়ে বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার, দুপুর একটায় ৭২ সেন্টিমিটার, দুইটায় ২৫ সেন্টিমিটার, তিনটায় ৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেখানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। রাত পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে বন্যা সতর্কতা জারি করে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে জেলার ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, গয়াবাড়ি, ঝুনাগাছ ছাপানী, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে ১৫ গ্রামের ৫ হাজার পরিবার বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এবং মাইকিং করে তিস্তা পারের মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলছি। ইতোমধ্যে অনেকে তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নৌকা মজুদ রাখা হয়েছে।’
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এখনো ঘরবাড়িতে পানি না উঠলেও এলাকাবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফাউদ্দৌলা বলেন, ‘বুধবার বেলা ৩টায় তিস্তা ব্যরাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেণ্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা ৪টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রেখে সতর্কাবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি সকাল থেকে তিস্তা নদী এলাকায় অবস্থান করছি। এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে প্রচারণা চলছে। ইতোমধ্যে চর এলাকার মানুষজন তাদের গরু বাছুর নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছেন। যাদের জমিতে আধাপাকা ধান আছে তারাও তাদের ধান কেটে নিচ্ছেন।’
জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘আমি তিস্তা পারে অবস্থান করছি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সৃষ্ঠ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিমলা উপজেলা পরিষদকে ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও প্রয়োজনীয় ত্রাণ মজুদ আছে।’ সূত্র: বাসস
ঢাকা বিজনেস/এনই