২২ ডিসেম্বর ২০২৪, রবিবার



জানা-অজানা
প্রিন্ট

যেভাবে এলো চুয়িংগাম

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ০২ আগস্ট, ২০২৩, ১০:৩৮ এএম
যেভাবে এলো চুয়িংগাম


চুয়িংগাম শিশু-কিশোরদের কাছে পরিচিত একটি খাবার। প্রায় প্রতিটি মুদি দোকানেই বিভিন্ন স্বাদের, রঙের চুয়িংগামের দেখা পাওয়া যায়। শিশুদের কাছে এটি পছন্দের একটি খাবার। খেলার মাঠে খেলোয়াড়দের চুয়িংগাম চিবাতে দেখা যায়।

খেলার বা অনুশীলনের সময় যেন গলা শুকিয়ে না যায় সেজন্য চুয়িংগাম চিবিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি কিংবা বৃদ্ধদের কাছে এর তেমন আবেদন না থাকলেও ইউরোপে বা আধুনিক দেশগুলোতে সময় কাটানোর মাধ্যম হিসেবে এটি দারুণ এক খাদ্য। সেলিব্রিটি ব্যক্তিত্বদের ফেলে দেওয়া চুয়িংগাম কুড়িয়ে এনে পরবর্তীতে নিলামে বিকোনোর খবরও শোনা গিয়েছে বেশ কয়েকবার। এই খাবারটির রয়েছে এক মজাদার ইতিহাস।

ইতিহাস অনুযায়ী, চুয়িংগাম চিবানো হতো প্রাচীনকাল থেকেই। আজ থেকে ৯ হাজার বছর পূর্বে উত্তর ইউরোপের বাসিন্দারা একধরনের গাছের ছাল চিবোতেন। গবেষকদের মতে, সম্ভাব্য দুটি কারণে তারা গাছের ছাল চিবাতেন। একটি হচ্ছে, ওই গাছের ছাল চিবানোর ফলে তারা একটি আলাদা স্বাদ লাভ করতেন। আরেকটি হচ্ছে, দাঁতের ব্যথা সারানোর জন্য তারা এরকমটা করে থাকতেন৷ আমেরিকা মহাদেশের প্রাচীন মায়া সভ্যতায়ও চুয়িংগাম চাবানোর নিদর্শন পাওয়া যায়। মায়া সভ্যতায় স্যাপোডিল্লা গাছ থেকে উৎপন্ন হয়ে জমে যাওয়া রস চিবানো হতো। সাধারণত ক্ষুধা বা তৃষ্ণা মেটাতে এমনটা করতো মায়ানরা। এরপর মেক্সিকোর বিখ্যাত আজটেক সভ্যতায়ও স্যাপোডিল্লা গাছ থেকে উৎপন্ন চুয়িংগাম খাওয়া হতো।


আগে চুয়িংগাম চিবানোর কোনো বিশেষ নিয়মের চিহ্ন পাওয়া না গেলেও আজটেক সভ্যতায় চুয়িংগাম চিবানোর নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। শিশু ও অবিবাহিত নারীরা প্রকাশ্যেই চিবোতে পারতেন। বিবাহিত নারী ও বিধবাদের ক্ষেত্রে নিয়ম ছিল ব্যক্তিগত পরিসরে উপভোগ করার। তারা মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এমনটা করতেন। আর পূর্ণবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে একেবারেই আড়ালে চিবোনোর কঠোর নিয়ম ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দাঁত পরিষ্কার করা।

উত্তর আমেরিকায় পাইন গাছের সদৃশ ‘স্প্রুস ট্রি’র সর্জরস চিবানোর চল ছিল। পরবর্তীতে ইউরোপীয়রা সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করলে তারাও চিবানোর সংস্কৃতি অব্যাহত রাখে। ১৮৪০ সালের দিকে প্রথমবারের মতো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে জন কার্টিস নামের একজন ব্যক্তি চুয়িংগাম শিল্পের সূচনা করেন। তিনি স্প্রুস গাছের রস সংগ্রহ করে গরম পানিতে সিদ্ধ করতেন। এরপর সেই রস জমিয়ে ছোট টুকরো করা হতো। এরপর সেগুলোতে ভুট্টা থেকে তৈরি ময়দা মাখানো হতো যেন অনেকগুলো একসঙ্গে রাখলে একটির গায়ে আরেকটি লেগে না যায়। এভাবে বানানো চুয়িংগামের স্বাদ খুব একটা আকর্ষণীয় ছিল না। ফলে চুয়িংগাম উৎপাদকরা প্যারাফিন তেলসহ বিভিন্ন উপাদান যোগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

নিউ ইয়র্কের থমাস অ্যাডামস নামের একজন ব্যক্তির সঙ্গে নির্বাসিত মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট এ্যান্টনিও লোপেজ ডি সান্তা আন্নার দেখা হয়। নির্বাসিত প্রেসিডেন্টের কাছে থাকা স্যাপোডিল্লা গাছের নির্যাস থেকে উৎপাদিত চুয়িংগাম ‘চিকল’ থমাস অ্যাডামসের নজরে আসে। তারা দুজনে ‘চিকল’ নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা করেন। নির্বাসিত প্রেসিডেন্ট লোপেজ চেয়েছিলেন রাবারের বিকল্প হিসেবে আমেরিকায় তারা চিকলের প্রসার ঘটাবেন। কিন্তু পরীক্ষাগুলোতে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না আসায় তারা হতাশ হয়ে পড়েন। থমাস অ্যাডামস দেখতে পান, চিকল যদি উন্নতমানের চুয়িংগাম তৈরিতে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ভালো সম্ভাবনা আছে। ১৮৮০ সালের দিকে তিনি একটি কোম্পানি তৈরি করেন, যেটি পুরো আমেরিকায় চিকল থেকে তৈরিকৃত চুয়িংগাম সরবরাহ করতো।


২০ শতকে চুয়িংগামের বাজার বড় হতে থাকে। আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায় উইলিয়াম রিংলে জুনিয়র নামের একজন ব্যক্তি সাবানের বিপণন করতেন। তিনি তার পণ্য বিপণনের জন্য বিক্রেতাদের বিভিন্ন বাড়তি সুবিধা দেয়া শুরু করেন। যেমন- কোনো বিক্রেতা যদি পাইকারি হারে নির্দিষ্ট পরিমাণ সাবান কিনতো, তবে তিনি বেশ কিছু বেকিং পাউডারের ক্যান ফ্রি দিতেন। পরবর্তীতে দেখা গেল বাজারে সাবানের চেয়ে বেকিং পাউডারই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এরপর তিনি সাবান বাদ দিয়ে বেকিং পাউডারের বিপণন শুরু করেন। বাড়তি সুবিধা হিসেবে বিক্রেতাদের কিছু চুয়িংগামের প্যাকেট ফ্রি দিতেন। একপর্যায়ে বাজারে চুয়িংগামের বিশাল চাহিদা তৈরি হয়। ১৮৯৩ সালের দিকে তিনি চুয়িংগাম তৈরির দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন (জ্যুসি ফ্রুট এবং রিংলে’জ স্পিয়ারমিন্ট)। চুয়িংগামের বিজ্ঞাপনের পেছনে তিনি অনেক টাকা ব্যয় করেছিলেন। এটি তাকে আমেরিকার অন্যতম সেরা ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করে।

এদিকে ১৮৮৫ সাল থেকেই চুয়িংগাম উৎপাদন করে যাচ্ছিল ফ্র্যাঙ্ক ফ্লিয়ার নামের একজন ব্যক্তির নিজস্ব কোম্পানি। তিনি চেয়েছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলো যেরকম চুয়িংগাম বিক্রি করছে, তার চেয়ে ভিন্ন ঘরানার কিছু বিক্রি করবেন। ১৯০৬ সালে তিনি বাবল গাম বাজারে আনেন, যার নাম দিয়েছিলেন ‘ব্লিবার-ব্লাবার’৷ কিন্তু এটি সেভাবে আলোড়ন তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। ১৯২৮ সালে ফ্র্যাঙ্ক ফ্লিয়ারের প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী ওয়াল্টার ডাইমার আরও উন্নত বাবল গাম তৈরির কৌশল উদ্ভাবন করেন। ওয়াল্টার ডাইমারের উদ্ভাবিত কৌশলের বাবল গামের নাম দেয়া হয় ‘ডাবল বাবল’। এই বাবল গাম বাজারে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন স্বাদের ও বর্ণের চুয়িংগাম তৈরি করে চলেছে।

ঢাকা বিজনেস/এন/



আরো পড়ুন