প্রতিবছর উজানের ঢলের শঙ্কা নিয়ে হাওরে বোরো ধান কাটতেন কৃষকরা। বেশির ভাগ সময় পাকা ধান কাটার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতো ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাত। এই বছর বৈশাখ মাসে দুই-একদিন ছাড়া ফকফকে রোদ। ছোট-বড় ২৩ হাওরে শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার ঘরে তোলার পালা। তাহিরপুরের কৃষক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে হাওরের কৃষকরা উচ্চ ফলনশীল ও আগাম ফলনশীল জাতের ধান রোপণ করেছেন। এছাড়া আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে। এ কারণে স্বল্প সময়ের মধ্যে হাওরে ধান কাটা শেষ হয়েছে। ২০১৭ সালে আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে হাওরডুবির পর এমন সোনার বৈশাখ পাননি কৃষকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। এরমধ্যে হাওরে রোপণ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৩৯০ হেক্টর। আর ৪ হাজার ৩০ হেক্টর বিভিন্ন গ্রামের পাশের জমিতে রোপণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার টন। এরমধ্যে হাওরে শতভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। হাওরের বাইরে ৪৭ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলার বৃহত্তর শনি হাওরের কৃষক মো. শামসুল আলম বলেন, ‘আমার জীবনেও এরকম ভালো ফসল হতে দেখিনি। এ বছর আমাদের খুবই ভালো ফলন হয়েছে। এমন সোনার ফসল ঘরে তুলে মনটা শান্তি হইছে।’
মো. আব্দুন নূর নামে একজন শ্রমিক বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে হাওরে ধান কাটি। প্রত্যেক বছর মেঘ-বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে কষ্ট হয় আমাদের। বৃষ্টির মধ্যে কোমর পানিতে নেমে ধান কেটেছি। এবারের মতো ভালো বৈশাখ কোনো বছর পাইনি। এ বছর ধান কাটায় কোনো বৃষ্টি নেই, অনেক রোদ। ফলনও ভালো। তাই গরমে ঘাম ঝরলেও ধান কাটতে ভালো লাগছে।’
কৃষক সুহেল মিয়া বলেন, ‘এবার আমাদের বাম্পার ফলন হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি নেই, রৌদ্রময় দিন। ধান কাটায় কোনো ঝামেলা হইছে না। আমরা আনন্দের সঙ্গে ফসল ঘরে তুলছি।’
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাছান-উদ-দৌলা বলেন, ‘এ বছর নির্বিঘ্নে কৃষকরা ধান কাটা শেষ করেছেন। শুধু কাটা নয়, সঙ্গে সঙ্গে ধান শুকিয়ে ঘরেও তুলতে সক্ষম হয়েছেন।’তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে উপজেলায় ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান উৎপাদন বেশি হয়েছে।’
ঢাকা বিজনেস/এইচ/এনই/