ঈদের দিন পর্যটকশূন্য ছিল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। তবে ঈদের দ্বিতীয় দিন কক্সবাজার সৈকতে লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হয়েছে।
রোববার (২৩ এপ্রিল) বিকালে সমুদ্র সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, লাখো মানুষ সৈকতে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ সমুদ্রের নীল জলরাশিতে স্নানে মগ্ন, কেউ বিচবাইক ও ঘোড়ার পিঠে চড়ে পুরো সৈকত দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, আবার কেউ বালিয়াড়িতে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন।
ঢাকার মিরপুর থেকে ভ্রমণে আসা দম্পতি জমির চৌধুরী ও শারমিন জানান, বছরে একবার আসে ঈদ, আর এই দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে আমাদের সমুদ্রপাড়ে আসা। ঢাকার চার দেয়ালে থাকতে থাকতে জীবনটা যেন বন্দি হয়ে গিয়েছিল। তাই একটু বিনোদন ও অবসাদ দূর করতে কক্সবাজার চলে এসেছি।
ঢাকা থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক মিশুক বলেন, ‘বাবা মায়ের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে এসেছি। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। কক্সবাজার আসলে দেখার মতো জায়গা। এখানে দেখার অনেক কিছু আছে।’
স্থানীয় পর্যটক ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘আমি চকরিয়া থেকে সমুদ্র সৈকত দেখতে এসেছি। সমুদ্রের পাশে বসবাস করেও সখের বসে কখনো সমুদ্র দেখতে আসা হয় না। ছেলে মেয়েগুলো বায়না ধরলো সমুদ্র দেখবে, তাই পরিবার নিয়ে সৈকতে চলে আসা। আজকে এখানে অনেক পর্যটকও দেখা যাচ্ছে।’
বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘ঈদের প্রথমদিনের চেয়ে আজকে দ্বিতীয়দিনে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে। এখন যেহেতু পর্যটন মৌসুম নেই, তাই প্রায় হোটেলে ৪০- ৫০ পারসেন্ট ছাড় দিচ্ছেন। সরকারি ছুটি পাঁচ দিন হলেও কক্সবাজারে টানা এক সপ্তাহ পর্যটকের আনাগোনা থাকবে। প্রতিদিন এক লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসছেন।’
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খাঁন বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে পাঁচদিনে কক্সবাজারে অন্তত পাঁচ লাখ পর্যটক আসবেন। এতে ৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কক্সবাজারের সাড়ে চার শতাধিক হোটেল মোটেলের অধিকাংশ হোটেলে ৭০-৮০ পারসেন্ট পর্যন্ত বুকিং সম্পন্ন হয়েছে এক সপ্তাহ আগে থেকে।’
সৈকতের ঝিনুক ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম বলেন, ‘আজ ঈদের দ্বিতীয়দিন সৈকতে অনেক পর্যটক ছিল। তবে স্থানীয়দের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ছিল। বেচাবিক্রি ভালোই হয়েছে আমার। তবে আগামীকাল থেকে আরও বেশি বিক্রি হবে।’
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, ‘শহরে ৭ শতাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে। সমিতির আওতাভুক্ত রেস্তোরাঁগুলোতে মূল্য তালিকা রয়েছে। তালিকার চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা হলে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের একাধিক তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে নালিশ করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। জেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটে আমাদের নজরদারি রয়েছে। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের সার্বক্ষণিক সেবা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। হোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের কক্ষভাড়া যাতে অতিরিক্ত হারে আদায় না হয় এবং রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের দাম বেশি আদায় বন্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তাফহীম/এইচ