সবজির বাজার চড়া। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, একদিনের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছে। আর বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় সবজির দাম বেড়েছে। তবে মাছ ও মাংস আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। শনিবার (৮ এপ্রিল) রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, চিচিংগা, মুলা, টমেটো, কাঁচামরিচ, করলা, সিমসহ অধিকাংশ সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল (৭ এপ্রিল) প্রতি কেজি সিম বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মাত্র একদিনের ব্যবধানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। গতকালকে লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। একদিনের ব্যবধানে ২০ টাকা পেয়েছে বেগুনের দাম।
ছোট-বড় বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কম। আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। যার কারণে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে সবজির দাম বেশি হলেও বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। তারা আরও বলেন, ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে, দ্বিতীয়ত বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ কিছু বাড়তি দামে বিক্রি না করলে আমরা তো চলতে পারবো না। তবে তারা এও বলছেন, ২০ রমজানের পর আবারও বাড়তে পারে ক্রেতা সমাগম।
সরেজমিন ঘুরে আরো জানা গেছে, প্রতি কেজি ঢেড়শ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, প্রতি হালি কাঁচাকলা ৮০ টাকা, প্রতি কেজি শসা ৭০ টাকা, উসতা ১০০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা, কাকরোল ১৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, চিচিংগা ৬০ টাকা, সজনা ১০০ টাকা, ঝিংগা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবু আকার ভেদে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি। তবে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ দেশি পেঁয়াজের থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা প্রতি কেজি।
মহাখালী কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসেছেন সাব্বির আহমেদ মমতাজি। মহাখালির টিবি গেটের পাশের মসজিদের সেক্রেটারি তিনি। ঢাকা বিজনেসকে তিনি বলেন, ‘রমজান আসলেই আমাদের দেশে সব কিছুর দাম বেড়ে যায়। এবারের রমজানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব কিছু। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা বেশি দাম হাঁকিয়ে থাকে। যারা উচ্চবিত্ত তাদের খুব একটা কষ্ট না হলেও, কষ্ট হয় নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর।’
এদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম না বাড়লে, দাম বেড়েছে সোনালি ককের। প্রতি কেজি বড় বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা ও ছোট ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ২২৫ টাকা। অরিজিনাল সোনালি কক বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ টাকা। কয়েকদিন আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকায়। এছাড়া, বিক্রেতাদের ভাষ্যমতে, দুই নাম্বার সোনালি কক বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা প্রতি কেজি।
কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. জিয়াউল হক ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সোনালি কক মুরগির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন ও সরবরাহ কম হওয়ায় মূলত কিছুটা দাম বেড়েছে সোনালি ককের।’
এদিকে, সরেজমিন ঘুরে আরও জানা গেছে, আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছ ও মাংস। প্রতিকেজি গরুর মাংস সাড়ে ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গুলশান-২ নম্বরের সবজি বিক্রেতা বিরোজ বড়ুয়া ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কাস্টমার অনেক কমে গেছে। আমার বড় বড় কিছু কাস্টমার ছিল সেগুলোও এখন নেই। ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। রমজানের মাঝামাঝিতে কাস্টমার তেমন থাকে না। তবে আশা করছি, কয়েক দিন পর কাস্টমার বাড়তে পারে।’
বাজারগুলোতে প্রতি ডজন ফার্মের লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা এবং সাদাটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১১৫ টাকা। মাছও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। রুই মাছ ২৬০ টাকা থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, পাবদা সাড়ে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা দরে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
কাওরানবাজারের আড়তদার ও পাইকারি পেঁয়াজবিক্রেতা মো. স্বপন ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজের চেয়ে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজের দাম বেশি বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় মূলত পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/