দেশীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খান। একাধিক প্রেম, গোপনে বিয়ে, সন্তানের খবর গোপন ইত্যাদি অভিযোগে গেলো বছরটি বেশ টালমাটাল অবস্থায় কেটেছে তার। নতুন বছরের শুরুটাও খুব একটা স্বস্তিতে কাটেনি আরেক নায়িকা পূজা চেরীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর গুঞ্জনে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরও ভয়াবহ অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবির প্রযোজক রহমত উল্লাহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতি বরাবর এক লিখিত অভিযোগে অসদাচরণ, মিথ্যা আশ্বাস, ধর্ষণ ও পেশাগত অবহেলার মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির ক্ষতি সাধনের অভিযোগ করেছেন এই ছবিটিতে অভিনয় করা শাকিব খানের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৫ মার্চ) বিকালে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালি এই প্রযোজক এফডিসিতে উপস্থিত হয়ে এ অভিযোগ করেন। প্রযোজক রহমত উল্লাহর লিখিত অভিযোগটি হাতে পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার।
রহমত উল্লাহ লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, ‘২০১৭ সালে পূর্ব চুক্তি মোতাবেক অভিনেতা শাকিব খান ‘অপারেশন অগ্নিপথ’নামক ছবির কাজে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। আমি সেই ছবিটির অন্যতম প্রযোজক। তার মতো একজন বিখ্যাত অভিনেতাকে নিজের ছবিতে অভিনয় করাতে পারব জেনে পুলকিত ছিলাম। ছবিটি মুক্তি পেলে ব্যবসা সফল হবে সেই বিশ্বাস ছিল। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের দর্শক চাহিদা অনেক। তাই আমাদের প্রত্যাশা ছিল তিনি আমাদের সঙ্গে পেশাগত আচরণ করবেন। অথচ, ২০১৭ সালে শুরু হওয়া সেই ছবির কাজ আজ পর্যন্ত তিনি শেষ করেননি।’
২০১৭ সালে 'অপারেশন অগ্নিপথ'র চিত্রায়নের সময় শাকিব খান যেসব ক্ষতিকর কাজ করেছেন সেগুলোকে ৫টি পয়েন্ট আকারে অভিযোগপত্রে তুলে ধরেছেন ওই প্রযোজক। অভিযোগপত্রের অনুলিপি হুবহু নিচে দেওয়া হলো :
১. আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও কোনো রকমের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুটিং বাতিল করে দিতেন।
২. তার খাদ্যাভ্যাসজনিত চাহিদা ছিল এমন যে হঠাৎ করে তিনি অদ্ভুত রকমের খাবার খেতে চাইতেন, আর তাতেই পুরো শুটিং ইউনিট নিয়োজিত হতো তার পছন্দের খাবার খুঁজে বের করার জন্যে। এতে করে শুটিংয়ের কাজে যেমন ব্যাঘাত হতো, তেমনি চলচ্চিত্রের নির্মাণ ব্যয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
৩. তিনি শুটিং করতে আসতেন নিজের ইচ্ছামতো সময়ে। অনেক সময় এমন হতো যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল সেট বানিয়ে আমরা তার জন্যে অপেক্ষা করতাম। তিনি হয়তো শেষ বেলায় দুই-এক ঘণ্টা অভিনয় করার জন্য আসতেন। এভাবে শুটিং না করেও সবার বেতন দিয়ে আমরা শুধু অপেক্ষা করতাম তিনি আসবেন বলে।
৪. এখন বর্ণনা দিচ্ছি তার ব্যয়বহুল যৌনাচারের। তাকে নিয়মিত পতিতালয়ে নিয়ে যেতে হতো, আর তা না হলে তার হোটেল কক্ষে অস্ট্রেলিয়ান যৌনকর্মীদের নিয়ে আসতে হতো। এই ব্যাপারটি ছিল প্রতিদিনের রুটিন। কখনো কখনো একাধিকবার। এই সব যৌনকর্মীকে মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক আমাদেরই দিতে হতো।
৫. একবার তিনি আমাদের একজন নারী সহ-প্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগী এই নারীকে তিনি অত্যন্ত পৈশাচিকভাবে নির্যাতন করেন। গুরুতর জখমসহ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। নির্যাতিতা তখন এই ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত নারী। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এই ঘটনার পর তিনি এবং তার পরিবার সামাজিকভাবে যেই গ্লানি এবং কুৎসার শিকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের এবং তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। ওইদিন আমরা যখন সহকর্মীকে নিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত, শাকিব খান সেইদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে চুপিসারে চলে যান। এরপর থেকে শাকিবের সঙ্গে বিভিন্ন সময় যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।
এ অভিযোগগুলো সম্পর্কে শাকিব খানের মন্তব্য জানতে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় আশিকুর রহমান পরিচালিত ও শাকিব খান অভিনীত ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ ছবিটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে।
ঢাকা বিজনেস/এন/