পণ্য রপ্তানির নামে ৪ গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান দেশ থেকে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার করেছে বলে জানিয়েছেন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরে মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম। তিনি জানান, ‘রপ্তানি নথি জাল করে ১ হাজার ৭৮০টি চালানের বিপরীতে এ অর্থ পাচার করা হয়েছে।’ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলে অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য জানান।
ফখরুল আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের একটি গোয়েন্দা দল গত ৩১ জানুয়ারি সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের সাতটি কনটেইনারে অভিযান চালায়। এই সময় রপ্তানি জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা মেলে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কনটেইনারগুলোয় রাখা নয়টি পণ্যের চালার পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ঘোষণাবহির্ভূত একাধিক পণ্য পাওয়া যায়। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ঘোষণা অনুযায়ী টি-শার্ট ও নারীদের পোশাক রপ্তানির কথা থাকলেও সেখানে বেবি ড্রেস, জিন্স প্যান্ট, লেগিংস, শার্ট ও শাল পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কাস্টমস।
কমিটি জানায়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানটি এর আগে ৮৬টি পণ্যের চালান রপ্তানি করেছে। চালানগুলোয় ২১ কোটি টাকার ৯৯৭ টন পণ্য ছিল। চালানগুলোর বিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত এক্সপোর্ট মনিটরিং সিস্টেম বা ইএক্সপি নথি পর্যালোচনা করে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। একটি ইএক্সপি একাধিক বিল অব এক্সপোর্টে ব্যবহারের সুযোগ নেই। সাবিহা সাইকি ফ্যাশন ইএক্সপিগুলো ভিন্ন ভিন্ন রপ্তানি প্রতিষ্ঠানের নামে ইস্যু করা হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন, ইমু ট্রেডিং করপোরেশন ও ইলহাম নামের আরও তিন প্রতিষ্ঠানের একই ধরনের অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসে।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, এ চারটি প্রতিষ্ঠান এর আগে বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ৭৮০টি পণ্যের চালানে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। ১৮ হাজার ২৬৫ টন পণ্যের বিপরীতে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ৩৮২ কোটি টাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের রফতানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, ট্রাউজার, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি ইত্যাদি। রফতানির নামে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, নাইজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করেছে এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৩৮২টি পণ্যের বিপরীতে ১৪ হাজার ৮৫ টন পণ্য ভুয়া নথি ব্যবহার করে রপ্তানি করেছে। যার রপ্তানি মূল্য প্রায় ২৮২ কোটি টাকা। অন্যদিকে ইমু ট্রেডিং করপোরেশন ২ হাজার ৫২৩ টন পণ্যের ২৭৩টি চালান এবং ইলহাম ৬৬০ টন পণ্যের ৩৯টি চালান জাল নথি ব্যবহার করে রপ্তানি করেছে।
ফখরুল আলম বলেন, এছাড়া আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রপ্তানির নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দায়ের করা হবে।