প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। চাহিদার তুলনায় কম পণ্য কিনেই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। রমজান উপলক্ষে আগামী সপ্তাহে আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। শনিবার (১১ মার্চ) রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ পণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া দিন-দিন মাছ-মাংসের দাম নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
রাজধানীর কাচাবাজারগুলোতে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল ৬০ টাকা। আর বাজারে ময়মনসিংয়ের তাল বেগুন উঠেছে। প্রতি কেজি তাল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, এক সপ্তাহ আগেও একই দামে বিক্রি হয়েছে। টমেটোর দাম বাড়েনি। ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চায়না রসুন ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি, আর দেশি রসুন ১০০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে ছিল ১২০ টাকা।
ইন্ডিয়ান আদা ১৬০ টাকা, ইন্দোনেশিয়ান আদা ১০০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমেছে। এক সপ্তাহ আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় প্রতিকেজি। আলুর দাম কিছুটা কমেছে। প্রতিকেজি আলু ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা।
এদিকে, দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা, এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগে যা ছিল, এখনও তাই রয়েছে। ৪০ টাকা দরে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচ প্রতিকেজি ৪২০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ৪৬০ থেকে ৫০০ টাকায়।
মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারে এসেছেন শেখ আমজাদ আলী মিন্টু। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বাজার করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। আমাদের আয়তো বাড়েনি। পরিবার নিয়ে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্তদের বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজারের বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু আলুর দাম কমেছে। আর অধিকাংশ পণ্যের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে এবং কিছু পণ্যের দাম একই আছে।’
এদিকে, মসলার দামও বেড়েছে। প্রতিকেজি দারুচিনি ৪৪০ টাকা, সোয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮৫ টাকা, ছোট এলাচ প্রতি কেজি ২২০০ টাকা, বড় এলাচ ২৮০০ টাকা প্রতিকেজি এবং জিরা ৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও একই দামে বিক্রি হয়েছে এসব মসলা।
মিরপুরের হযরত শাহ আলী মার্কেটের কাঁচাবাজারের ক্রেতা আক্তার হোসেন বলেন, ‘এখন যে দামে পণ্য কিনছি, আগামী সপ্তাহে দাম আরও বাড়তে পারে রমজান উপলক্ষে। কাউকে কিছু বলে কোনো লাভ বেই। যে জিনিসের দাম বাড়ে, তার দাম আর কমে না।’
মাছ-মাংসের বাজার ঘুরে জানা গেছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪৫ থেকে ২৫০ টাকা। শবেবরাতের আগে এর দাম ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। সোনালি ৩৮০ টাকা, কক ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে একই দাম ছিল। দেশি মুরগির দাম বেড়েছে। প্রতিকেজি দেশি মুরগি ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫২০ থেকে ৫৫০ টাকা। এবং গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায় প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, শোল মাছ ৫৫০ টাকা, টাকি মাছ ৪০০ টাকা, শিং (ছোট), বড় আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি। ফার্মের ডিম ৪৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০ টাকা। তবে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। হাসের ডিম ৬৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগের সপ্তাহের মতোই।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের মসলা বিক্রেতা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘সপ্তাহের ব্যবধানে মসলার দাম বাড়েনি। তবে আগে থেকেই দাম বাড়া আছে। অল্প কিছু লাভ করে আমরা বিক্রি করছি।’
কাওরানবাজারের পাইকারি আদা-রসুন বিক্রেতা মো. ইয়াসিন শেখ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘প্রতিকেজি দেশি রসুন আমরা বিক্রি করছি ৮০ টাকা দরে। ইন্ডিয়ান রসুন ১২৫ টাকা বিক্রি করছি প্রতিকেজি। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১১০ টাকা প্রতিকেজি। চায়না আদা ২০০ টাকায় বিক্রি করছি, এক সপ্তাহ আগে ছিল প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। দেশি আদা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা। এখনও তাই হচ্ছে প্রতিকেজি। ইন্ডিয়ান (কেরালা) আদা প্রতিকেজি এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা, এখন ১৪০ টাকা।
ঢাকা বিজনেস/এইচ