১৯ মে ২০২৪, রবিবার



জানা-অজানা
প্রিন্ট

৫ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া

নুরজাহান নুর || ০৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ০১:৪২ এএম
৫ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া


সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মানুষ মানবিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক দূরত্বকে পুরোপুরি দূর করে দিচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে যেকোনো ব্যক্তি তথ্য, অভিমত, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি দেওয়া-নেওয়া করতে পারে। 

সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের আধুনিক জীবনে এক নতুন বাস্তবতা। নগর-বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে  চায়ের দোকানে মানুষ তথ্যের জন্য এখন আর পত্রিকার পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে না। এর বদলে এসেছে স্মার্টফোন ও আইফোননির্ভরতা। গণমাধ্যমে তথ্যের বিপণনের সাবেকি প্রথা এখন আর নেই। চারপাশে, দেশে-বিদেশে কী ঘটছে, সেগুলো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, গুগলসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পেয়ে যাচ্ছে সবাই। সে রকম ৫টি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে ঢাকা বিজনেসের আজকের এই আয়োজন। 

১. ফেসবুক (Facebook) 
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক।  ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ফেসবুকের যাত্রা। এর সদরদপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। বর্তমানে ফেসবুক মেটা কোম্পানির আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। 

চার সহপাঠীকে নিয়ে কলেজ ডরমিটরিতে ফেসবুকের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার রুমমেট, কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডুয়ার্ডো স্যাভেরিন, ডাস্টিন মস্কোভিত্‌স ও ক্রিস হিউজের যৌথ প্রচেষ্টায় ফেসবুক নির্মাণ করেন। ওয়েবসাইটটির সদস্য প্রাথমিকভাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু পরে সেটা বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লীগ ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।  এখন বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ জনপ্রিয় ওয়েবসাইটটি হলো ফেসবুক। বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ রক্ষায় প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করছে। শুরুর দিকে এর নাম ছিল ‘দ্য ফেসবুক ডটকম’। ফেসবুকের কার্যক্রম এখন শুধু সামাজিক যোগাযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ডিজিটাল বিজ্ঞাপন প্রচারেরও অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এটি।

ব্যবহারকারীরা বন্ধু সংযোজন, বার্তা দেওয়া-নেওয়াসহ ব্যক্তিগত তথ্য আপডেট করতে পারেন।  সেই সঙ্গে একজন ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় ও অঞ্চল-ভিক্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারেন। শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যকার জানাশোনাকে উপলক্ষ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বইয়ের নাম থেকে এই ওয়েবসাইটটির নামকরণ করা হয়েছে।  এটিতে বিনামূল্যে সদস্য হওয়া যায়।

অনেক উদ্যোক্তা বর্তমানে নিজের ব্যবসায়ের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন। এতে করে অনেকেই হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। 

২. ইন্সটাগ্রাম  (Instagram)  
বহুল পরিচিত একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। টিভি মিডিয়ার পরিচিত মুখ বা সেলিব্রিটিদের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। ইন্সটাগ্রাম  হলো কেভিন সিস্ট্রম, মাইক ক্রিগার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি মার্কিন ছবি ও ভিডিও শেয়ারিং সামাজিক নেটওয়ার্কিং পরিষেবা। ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর ইন্সট্রাগ্রামের যাত্রা শুরু হয়। 

অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের মিডিয়া আপলোড করতে দেয় যা ফিল্টার দিয়ে সম্পাদনা করা যায় এবং হ্যাশট্যাগ ও জিও ট্যাগিং দিয়ে বিন্যস্ত করা যায়। পোস্টগুলো সর্বজনীনভাবে বা পূর্ব-অনুমোদিত অনুসরণকারীদের সঙ্গে শেয়ার করা যায়। ব্যবহারকারীরা ট্যাগ ও অবস্থানের মাধ্যমে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের কন্টেন্ট ব্রাউজ করতে পারেন এবং আলোচিত কন্টেন্ট দেখতে পারেন। ব্যবহারকারীরা ছবি পছন্দ করতে পারে এবং একটি ব্যক্তিগত ফিডে অন্যান্য ব্যবহারকারীদের কন্টেন্ট যুক্ত করতে তাদের অনুসরণ করতে পারে। 

ইন্সটাগ্রাম বাণিজ্যিক পণ্য ও পরিষেবা প্রচার করতে সাহায্য করতে পারে। ভিজ্যুয়াল যোগাযোগের ওপর আলোকপাত করার মাধ্যমে এটি অন্যান্য সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে আলাদা করা যেতে পারে। ইন্সটাগ্রাম বিপণন একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন দেওয়ার একটি কার্যকর উপায়, কারণ বলা হয় যে একটি ছবি হাজার শব্দ বলে। প্ল্যাটফর্মটি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলিকে ব্র্যান্ডিং খরচ বাঁচাতেও সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এমনকি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩. টুইটার   (Twitter) 

১৬ বছর  ২০০৬ সালের ২১ মার্চ টুইটার প্রতিষ্ঠা হয়। জ্যাক ডরসি, নোয়াহ গ্লাস, বিজ স্টোন ও ইভান উইলিয়ামস টুইটার প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছরের জুলাই মাসে চালু এটি হয়। সদরদপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত।  টুইটার হল একটি মার্কিন মাইক্রোব্লগিং ও  সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং পরিষেবা, যেখানে ব্যবহারকারীরা ‘টুইট’ নামে পরিচিত বার্তা পোস্ট করে এবং যোগাযোগ করে। নিবন্ধিত ব্যবহারকারীরা টুইট পোস্ট, লাইক ও পুনঃটুইট করতে পারে। কিন্তু অনিবন্ধিত ব্যবহারকারীরা শুধু সেই টুইটগুলোই পড়তে পারে, যা সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ। 

ব্যবহারকারীরা টুইটারের সঙ্গে ব্রাউজার বা মোবাইল ফ্রন্টঅ্যান্ড সফ্টওয়্যার বা প্রোগ্রাম্যাটিকভাবে এর এপিআই এর মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। ২০২০ সালের এপ্রিলের আগে, পরিষেবাগুলো এসএমএসের মাধ্যমে উপলব্ধ ছিল। সারা বিশ্বে এটির ২৫টিরও বেশি অফিস রয়েছে৷ টুইটগুলো মূলত ১৪০ অক্ষরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু ২০১৭ সালের নভেম্বরে অ-সিজেকে ভাষার জন্য অক্ষরের সীমা দ্বিগুণ করে ২৮০ করা হয়। বেশিরভাগ অ্যাকাউন্টের জন্য অডিও এবং ভিডিও টুইটগুলো ১৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

২০১২-এর হিসাব অনুযায়ী, ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী প্রতিদিন ৩৪০ মিলিয়ন টুইট পোস্ট করেন। পরিষেবাটি প্রতিদিন গড়ে ১.৬ বিলিয়ন অনুসন্ধান প্রশ্ন পরিচালনা করে। ২০১৩ সালে এটি দশটি সর্বাধিক জনপ্রিয় ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে একটি ছিল। এটিকে ‘ইন্টারনেটের এসএমএস’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ২০১৯-এর হিসাব অনুযায়ী, টুইটারে ৩৩০ মিলিয়নেরও বেশি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল। বাস্তবে, ব্যবহারকারীদের সংখ্যালঘু অংশই বেশিরভাগ টুইট লিখে থাকে।

৪. লিংকডিন (LinkedIn)
লিংকডইন মাইক্রোসফটের অধীনস্থ সামাজিক যোগাযোগের একটি ওয়েবসাইট। ওয়েব সাইটটি ডিসেম্বর, ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ৫ মে, ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়। সামাজিক যোগাযোগের এই ওয়েবসাইটটি পেশাজীবীরাই বেশি ব্যবহার করে থাকে।

২০১৩ সালের এক বিবৃতিতে অনুযায়ী, বর্তমানে তাদের নিবন্ধিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন, যারা ২০০টি ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিক। এই সাইটটি বর্তমানে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইতালীয়, পর্তুগিজ, স্পেনিশ, ওলন্দাজ, সুইডিশ, রোমানিয়ান, রাশিয়ান, তুর্কি, জাপানিজ, চেক, পোলিশ, কোরিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান ও মালয় ভাষায় ব্যবহার করা যায়। কান্টকাস্টের এক সমীক্ষা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র থেকে লিংকডইনের মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১.৪ মিলিয়ন ও সারা বিশ্বে ৪৭.৬ মিলিয়ন। জুন ২০১১ সালে এর নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩৩.৯ মিলিয়ন যা বছরের শুরুর থেকে ৬৩ শতাংশ বেশি এবং এটি আরেক সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট মাইস্পেসকে ছাড়িয়ে যায়। লিংকডইন শেয়ার বাজারে আসে জানুয়ারি ২০১১ সালে ও প্রথম তাদের পাবলিক শেয়ার ছাড়ে ১৯ মে, ২০১১ সালে এলএনকেডি প্রতীক ব্যবহার করে। 

৫. পিন্টারেস্ট  (Pinterest) 
২০১০ সালের মার্চ মাসে পিন্টারেস্টের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। পিন্টারেস্ট একটি ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন কোম্পানি, যা ফটো শেয়ারিং ওয়েবসাইট হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি ব্যবহারের জন্য নিবন্ধন করার প্রয়োজন পড়ে। সাইটটি পল শিয়ারা, ইভান শার্প ও বেন সিলবারমান কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। এটি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র দলের অর্থায়নে কোল্ড ব্রিউ ল্যাবস কর্তৃক পরিচালিত।



আরো পড়ুন