২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



‘চলতি অর্থবছরে ১০ হাজার মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে’

ঢাকা বিজনেস রিপোর্ট || ০১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ১১:০২ পিএম
‘চলতি অর্থবছরে ১০ হাজার মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে’


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‌‘চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ হাজার মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে।’ 

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তরে তিনি বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের লিখিত জবাবে এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিট্যান্সপ্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ৪৯৩ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স অর্জিত হয়েছে।’ 

রেমিট্যান্সে প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে কর্মীদের উৎসাহিত করা; অধিক কর্মী পাঠানের মাধ্যমে রেমিট্যান্সে প্রবাহ বৃদ্ধি করা; অধিক রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে অনিবাসী/প্রবাসী বাংলাদেশি ওয়েজ আর্নারদের জন্য সরকার কর্তৃক বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা উল্লেখযোগ্য।

তিনি জানান, প্রবাসীদের মাঝে রেমিট্যান্স প্রেরণকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৫৭ জন এবং বিদেশে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক ক্যাটাগরিতে ১০ জনসহ মোট ৬৭ জনকে সিআইপি (এনআরবি) ২০২০ ঘোষণাপূর্বক সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও সিআইপি কার্ড প্রদান করা হয়েছে।

সংসদ নেতা আরও জানান, প্রবাসী কর্মীদের অর্জিত অর্থ বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য দূতাবাস অব্যাহত প্রচার চালিয়ে আসছে। প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসসহ দূতাবাসের সব অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিট্যান্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে।  

তিনি জানান, নতুন শ্রম বাজার অনুসন্ধান, বিদ্যমান বাজার সংহত করা এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলো আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

সরকারের নেওয়া বেশকিছু পদক্ষেপের ফলে গত এক বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সরকারি দলের কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। 

তিনি জানান, সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লি. (বোয়েসেল) এর মাধ্যমে ২০২২ সালে ৬১৫ জন পেশাজীবী এবং ১৭ হাজার ৯৭৮ জন দক্ষ কর্মীসহ মোট ১৮ হাজার ৫৯৩ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করেছে। বর্তমানে ১৬৮টি দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক শ্রম বাজার নির্ভরতা কমাতে চায়। সেজন্য পূর্ব ইউরোপ ও পূর্ব এশিয়ার নতুন কিছু দেশে শ্রমিক রপ্তানি করার চেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতি উপজেলা থেকে গড়ে বছরে এক হাজার কর্মী পাঠানোর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। 

সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও এক প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুত উৎপাদন নতুন ধারণা। এ বিষয়ে যেসব কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাতারবাড়ি, মহেষখালী বা বাঁশখালীতে হাইড্রোজেন বিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবতা যাচাই করা হবে।

শেখ হাসিনা জানান, বিশ্বের কোন কোন দেশে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়, যা ব্যয় সাপেক্ষে এবং তা বাণিজ্যিকভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। ব্যয় সাপেক্ষ হওয়ায় এ ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা এই মূহুর্তে নেই।

সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুত উৎপাদন খুবই ব্যয় সাপেক্ষ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের খরচ কমে এলে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।’

সরকারি দলের সংসদ সদস্য বেনজির আহমদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশে সবজি ও ফল রপ্তানি হচ্ছে এবং কৃষি পণ্য রপ্তানি ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে। 

তিনি জানান, বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে, সবজি ও পেঁয়াজে তৃতীয় স্থান, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে উন্নীত হয়েছে।

ঢাকা বিজনেস/এইচ



আরো পড়ুন