কাকলী আজফর আলীর ভাগ্নে। ছোটবোন শেলীর মেয়ে। সময়ে সময়ে কাকলী মামার খবর নেয়। হয়তো নিজের শৈশব আর কৈশোর মামা বাড়িতে মামা-মামীর আদরে সোহাগে কেটেছে বলে। এক রাতে শেলী নিরুদ্দেশ হলে তিন বছরের কাকলীর আশ্রয় বলতে ছিল আজফর আলী। বড় আদুরে ছেলের পাশাপাশি ভাগ্নিকেও মানুষ করেছেন তিনি। ভাগ্নিকে মানুষ করতে হবে বলে নিজেরা সন্তান নেননি। তাকে পড়ালেখা শিখিয়ে বড় করে নিজ হাতে বিয়ে দিয়েছেন। কাকলী এখন স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী সংসারী। আজফর আলী ভাগ্নির সুখ দেখে জলে আদ্র হোন। এইটুকু দেখাই তার বেঁচে থাকার স্বান্তনা। চির বিদায়ের আগে এতিম মেয়েটাকে সুখী দেখে যাচ্ছেন। ও ভালো আছে। নিজের চোখের কালী আর কালো জীবনের দুঃখের ভার তিনি এতিম মেয়েটাকে দিতে চান না। কাকলী তাই কখনে কিছু জানে না। তবে আন্দাজ করে। আন্দাজ করতে পারে বলেই সময় সময় জোড়াজুড়ি করে। জোর করে মামাকে নিজের কাছে নিয়ে রাখে। তবু আজফর আলী সময় করে আবার ছেলের নীড়ে ফিরে আসেন। পৗরুষের অপমান পুরুষের ঘরেই হোক।
বাবা কি জিনিস বোঝার বয়স হওয়ার আগেই বাবা হারিয়েছিল কাকলী। মাকে হারিয়েছিল মা’ বুলি ডাকতে শেখার আগে। তারপর থেকে মামার বাড়িতে মানুষ। মামীর কোলেই প্রথম কথা বলতে শেখে। মামীকে মা বলে ডাকে। আর মামাকে ডাকতে শুরু করে মামাই, মামাই। সেই থেকে মা আর মামাই তার আপনজন। মামাইকে নিজের বাসায় রাখতে চেয়ে সে বহু সাওয়াল জওয়াব কেেরছে। বলেছে এই জাহান্নামে কেন থাকবা তুমি। আমি তোমার আগে মরে গেলে থেক। এখন চলে আস আমার কাছে। আজফর আলী যায়না। গেলেও স্থায়ীভাবে ভাগ্নির বাসায় থাকতে পারে না। গেলে ছেলের বউ খুশিই হতো। আর ছেলে হাফ ছেড়ে বাঁচত। এটা বুঝেও থেকে গেছেন তিনি।
যেতে পারেন না উলফাত আর মনের তৃপ্তির জন্য। ঘুম থেকে উঠে নাতনিকে না দেখলে তিনি শান্তি পান না। বাবা-মা’রা শত গঞ্জনা সহ্য করে হলেও ছেলের সংসারে থেকে তৃপ্তি পান। সে তৃপ্তি পৃথিবীর আর কোথাও হয় না। শুধু সময় পাল্টালে ছেলেরা বেমালুম এই সত্যটা ভুলে যায়। সেই শৈশবে ছেলে যেমন কারণে-অকারণে বাবার বুকে বুক খুঁজে নিত। বাবারাও বুড়া হলে শিশু হয়ে যায়। তাদেরও শৈশবের ছেলে মানুষিতে ভরা আদুরে সেই সন্তানের কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছে করে। যেই ছেলেকে সে কাছাকাছি রেখে মানুষ করেছিল। ছেলের কাছ থেকে সোহাগ পেতে ইচ্ছে করে। আবদার করতে মন চায়। আহ্লাদে আটখানা হতে মন নেচে উঠে। কি নির্মম! বাবা শিশু হতে হতে সেই শিশু ছেলের শিশু মনটাই নষ্ট হয়ে যায়! দেহ যতো বাড়ে মন ততো পচে!
চলবে...
আরও পড়ুন: বুড়ি ও পরী | সরোজ মেহেদী