২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার



টাঙ্গাইলে ব্যতিক্রমী সংগীতানুষ্ঠান, প্রশংসায় ভাসছে প্রেসক্লাব

বিশেষ প্রতিনিধি || ১৭ এপ্রিল, ২০২৪, ০৮:৩৪ এএম
টাঙ্গাইলে ব্যতিক্রমী সংগীতানুষ্ঠান, প্রশংসায় ভাসছে প্রেসক্লাব


বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের দুই শিল্পীর অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক নগরী টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিত হলো বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান। শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেশ-বিদেশের শিল্পীদের প্রতিভা তুলে ধরতে ধারাবাহিক সংগীতানুষ্ঠানের উদ্যোগ নিয়েছে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব। তারই প্রথম প্রয়াস ছিল ওই আয়োজন। শ্রোতা-দর্শক সবাই বুঁদ হয়ে উপভোগ করেন ওই সংগীতানুষ্ঠান। আয়োজনের জন্য সকলের প্রসংশায় ভাসছেন উদ্যোক্তা টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা ও সদস্যরা। 

বৈশাখের ২ তারিখ (১৫ এপ্রিল, ২০২৪) সোমবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের ভিআইপি মিলনায়তনে বসে ওই সংগীতের আসর। ঢাকা বিজনেস সম্পাদক, আবৃত্তিকার উদয় হাকিমের উপস্থাপনায় মনোমুগ্ধকর ওই আয়োজনে অংশ নেন ভারতের শিল্পী অনন্যা বসাক এবং বাংলাদেশের বিস্ময় বাউল পলাশ শীল। বক্তৃতা বা অন্যসব অনুষঙ্গ বাদ দিয়ে শুধু কথা আর গানের অনিন্দ্য সমন্বয়কে সবাই ব্যতিক্রমী এবং উপভোগ্য বলে মন্তব্য করছেন। 

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য তানভীড় হাসান (ছোট মনির), টাঙ্গাইল ক্লাবের সাধারন সম্পাদক হারুন অর রশিদ, প্রবীন সংগীত শিল্পী এল এন মল্লিক, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সাধারন সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রমূখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক কাজী হেমায়েত হোসেন হিমু।


প্রথম পর্বে অনন্যা বসাক পরিবেশন করেন রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত এবং আধুনিক গান। দ্বিতীয় পর্বে পলাশ শীল পরিবেশন করেন কবিয়াল, বাউল ও লালন সাইজীর গান। 

টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে শিল্পীদের দেয়া হয় উত্তরীয়, ক্রেস্ট এবং কৃতি সনদ। উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয় এমপি ছোট মনির, হারুণ অর রশিদ, জাফর আহমেদ, নাসির উদ্দীন এবং উদয় হাকিমকে।  

উপস্থাপক উদয় হাকিম বলেন, সংগীত মন, মনন এবং পবিত্রতার প্রতীক। সংগীত আত্মাকে করে পরিশুদ্ধ, মনকে করে ঋদ্ধ। সংগীতের সুধা জাগ্রত করে মানবতা, হদয়কে দেয় পূর্ণতা। সংগীত তথা নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে ভূমিকা রাখতে চায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাব। সেই প্রচেষ্টার প্রথম আয়োজন সোমবারের ওই স্বর্ণালী সন্ধ্যা। 

সংসদ সদস্য তানভীড় হাসান (ছোট মনির) বলেন, পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করার মতো একটি অনুষ্ঠান। মন দিয়ে শুনলাম ভারতের শিল্পী অনন্যা বসাক এবং পলাশের গান। সবমিলিয়ে চমৎকার আয়োজন। সাংবাদিকদের দ্বারা ব্যতিক্রমী এ আয়োজনের প্রসংশা করে তিনি ঘোষণা করেন, টা্ঙ্গাইল প্রেসক্লাবের এ ধরনের আয়োজনের পাশে সব সময়ই থাকবেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি অনন্যা বসাককে টাঙ্গাইলে একটি সংগীত অ্যাকাডেমি করার অনুরোধ জানান। 


টাঙ্গাইল ক্লাবের সাধারন সম্পাদক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশীদ বলেন, উপস্থাপনা-পরিবেশনা, সংগীতের মান, আয়োজন; সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ একটি অনুষ্ঠান উপভোগ করেছি। এ আয়োজনের জন্য টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবকে ধন্যবাদ জানান তিনি। 

কথা ও গানের ব্যতিক্রমী আয়োজনে তন্ময় হয়ে শোনেন শ্রোতা-দর্শকেরা। তারা সবাই এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। স্থানীয় সংগীত শিল্পী আবুল কালাম আজাদ বলেন, গান-কবিতা হচ্ছে শোনার বিষয়, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার বিষয়। দর্শকের সেই চাওয়াটাকেই মূল্যায়ন করে যেভাবে অনুষ্ঠানটিকে সাজানো হয়েছে বা উপস্থাপন করা হয়েছে, তা এক কথায় অসাধারণ। 

অনুষ্ঠানে অনন্যা বসাক পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত: ও আমার দেশের মাটি এবং তুমি কি কেবলি ছবি, নজরুলগীতি: খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে, আধুনিক গান: প্রেম একবার এসেছিল নীরবে, এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায়, ও নদীরে একটি কথা। 

পলাশ গেয়েছেন, কবিয়াল বিজয় সরকারের ‘জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কী’, লালন সাইজির ‘আর কি হবে মানব জনম’, উদয় হাকিমের লেখা ‘ঘুম থেকে মন ওঠো সকালে’ এবং ‘পুষ্প তোমার পাঁপড়ি মেলো’, লালন সাইঁজির ‘যার জন্যে হয়েছিরে’ এবং ‘করি মানা কাম ছাড়ে না’। 


অনন্যা বসাকের জন্ম ১৯৭৬ সালে টা্ঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইলে। তাঁর পিতা জিতেন্দ্র নাথ বসাক ছিলেন অত্র অঞ্চলের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান নেতা। পরে তার পরিবার চলে যায় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার সমুদ্রগড়ে। ৯২ সালে তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এরপর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে সংগীতের উপর চারবছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করেন। সেখান থেকেই রবীন্দ্র সংগীতের উপর বি মিউজিকি এবং এম মিউজিক সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি মেদিনীপুরে সাম্য সমাজ টিচার্স ট্রেনিং কলেজে সংগীতের শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। সপরিবারে বাস করছেন কোলকাতায়। 

পলাশের জন্ম টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগরে। হেমনগর জমিদারবাড়ির রহস্যকোটরে অনুসুন্ধিৎসু মন তাকে বাউল করেছে। হেম শব্দের অর্থ সোনা, সেই কল্পকনক পরশ পাথরের স্পর্শে সোনা হয়ে উঠেছেন পলাশ। স্থানীয় স্কুল-কলেজ পেড়িয়ে তিনি সংগীতের উপর স্নাতকোত্তর করছেন ঢাকার ইউডা ইউনিভার্সিটিতে। এরইমধ্যে ২০১৯ সালে রিয়েলিটি শো ম্যাজিক বাউলিয়ানাতে তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। বর্তমানে আছেন বাউলবটবৃক্ষ গুরু শফি মন্ডলের ছায়াতলে। 

আয়োজনে যন্ত্রসংগীতে ছিলেন টাঙ্গাইলের স্বনামধন্য শিল্পীরা। তবলায় ছিলেন দেলোয়ার হোসেন, হারমোনিয়াম মাস্টার ছিলেন সবুজ বাঙ্গালী, কি বোর্ডে ছিলেন রনি, বাংলা ঢোলকে সুজন বৈরাগী এবং গিটারে ছিলেন শুভ। 

অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানান টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ।  

/ঢাকা বিজনেস/



আরো পড়ুন