১৪ অক্টোবর ২০২৪, সোমবার



জানা-অজানা
প্রিন্ট

কেমন ছিল সুচিত্রা সেনের জীবন

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ০৯ এপ্রিল, ২০২৪, ০৯:৩৪ এএম
কেমন ছিল সুচিত্রা সেনের জীবন


আপনারা নিশ্চয় জানেন, বাংলা চলচ্চিত্র জগতে অবিসংবাদিত মহানায়িকার নাম সুচিত্রা সেন। চলচ্চিত্রে তিনি যেমন খ্যাতি ও সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় আসীন হয়েছিলেন, ব্যক্তি জীবনে ঠিক ততটা কি তিনি সুখী ছিলেন? 

চলুন জেনে নেওয়া যাক, তার শৈশব-কৈশোর ও বেড়ে ওঠা  পারিবারিক জীবন, দাম্পত্য জীবন থেকে কর্মজীবন কেমন ছিল। তার আসল নাম রমা দাশগুপ্ত । ১৯৪৭ সালের শুরুর দিকে রমার বড় বোন উমার বিয়ে হয়। এরপর অনিবার্য দেশভাগের কথা ভেবে করুনাময়-ইন্দিরা দম্পতি পাঁচ কন্যা উমা, রমা, হেনা, লিনা, রুনা আর দুই ছেলে নিমাই ও চার বছরের গৌতমকে নিয়ে কলকাতায় চলে যান। 

তিন বছর পরে পুরীতে সপরিবারে বেড়াতে যান রমা। সেখানে চোখে পড়ে যান মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দিবানাথ সেনের ঠাকুমার। আদর সোহাগ আর বাড়তি শাসন পেয়ে বেড়ে ওঠা রমা তখন বিয়ের জন্যে পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও কলকাতার বনেদি পরিবার দেখে না করতে পারেননি করুনাময়।

বিয়েটা যখন হয় তখন রমার বয়স ১৬ বছর। দিবানাথের বাবা ছিলেন ব্যরিস্টার আদিনাথ সেন।  পরিবারের আদিনিবাস ছিলো ঢাকার গ্যান্ডেরিয়ায়। বিয়ের পর, স্বামীর পদবী পেয়ে রমা দাশগুপ্ত হয়ে যান রমা সেন। 

মেয়েকে বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার পাত্রের সাহতে বিয়ে দিয়ে পরিবার খুশি হলেও রমার মনের খোঁজ রাখেনি কেউ। ৩২ বালিগঞ্জ প্লেসের প্রাসাদোপম বাড়ি অর্থ্যাৎ শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পর, অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন রমা। কেননা তার শ্বশুরবাড়ির পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া তার জন্যে কঠিন ছিলো। শ্বশুরবাড়ির আগাগোড়া ছিলো আভিজাত্যে টুইটম্বর। স্বামীর কাছের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি।  পরে রমা জানতে পারেন দিবানাথের বেপরোয়া জীবনযাপনকে সংযত করতে শ্বশুর আদিনাথ সেন পুত্রবধূ করে তাকে ঘরে এনেছেন।

একবছর পর তাদের একটি সন্তানও হয়, কিন্তু সেই সন্তান বাঁচেনি। এরপর পরিবারের তরফে মেলে কুৎসা। তারপর স্বামী দিবানাথ সুন্দরী স্ত্রী রমাকে নিয়ে  হাজির হন ষ্টুডিও পাড়ায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বামীর কথা মত জুনিয়ার আর্টিস্ট চরিত্রে অভিনয় করে যা অর্থ পেতেন সবটাই চলে যেত দিবানাথের কাছেই। নিজের দুঃখ মনে চেপে রক্ষী স্বামীর পাশে হাসিমুখেই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। একসময় শ্বশুরমশাইয়ের দৌলতে নায়িকা হিসাবে একটি ছবি শুটিং করেন কিন্তু সেই ছবি মুক্তি পেল না।

এতদিনে আবারও কন্যা সন্তানের জননী হয়েছেন অভিনেত্রী, মেয়ের নাম রাখলেন মুনমুন সেন। কিন্তু মা হওয়ার আগেই স্ত্রীকে দিয়ে অভিনয়ের জন্য আগে থেকেই মোটা টাকা নিয়ে রেখেছিলেন স্বামী দিবানাথ। তাই সহকারী পরিচালক নীতিশ রায়ের মতে পাল্টে দেওয়া হয় রমা নাম। জন্ম হয় সুচিত্রা  সেনের। সুচিত্রা নামেই ছবির জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান অভিনেত্রী। তবে সুপারস্টার হয়ে গেলেও নিজের রোজগারের বেশিভাগটাই স্বামীকে দিয়ে দিতেন অভিনেত্রী।

দিবানাথ চেয়েছিলেন সারাজীবন স্ত্রীকে নিজের হাতের পুতুল করেই রেখে দিতে। কিন্তু বেশিদিন এভাবে চলল না, একসময় ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। ততদিনে পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটি যেমন হিট তেমনি চর্চিত টলিপাড়ায়। দিন দিন সুন্দরী হয়ে উঠছে স্ত্রী অথচ বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন দিবানাথ। পর্দায় উত্তম-সুচিত্রাকে দেখে সহ্য পর্যন্ত করতে পারতেন না। একসময় অ্যাসিড ছুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন সুচিত্রা সেনকে। কিন্তু সামান্য ক্ষতি হলেও বেঁচে যান অভিনেত্রী। এরপর মদ্যপ স্বামীকে ছেড়ে আলাদা হয়ে যান সুচিত্রা সেন।

যদিও বিচ্ছেদ নেননি তবে সম্পর্ক প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর একদিন শুটিং চলাকালীন খবর পান স্বামী আর নেই। নিজেই সিঁদুর মুছে নিয়েছিলেন। একসময়ে সংসার নিয়েই থাকতে চেয়েছিলেন আজকের মহানায়িকা, কিন্ত স্বামীর জন্যই আসতে হয়েছিল অভিনয়ে। শেষ জীবনে অতন্ত্য এক হয়ে পড়েছিলেন তিনি, প্রচারের আড়ালেই থাকতে পছন্দ করতেন। 

সূত্র: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত তথ্য অবলম্বনে...



আরো পড়ুন