একুশে ফেব্রুয়ারি, শবেবরাত ও মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে টানা চারদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে ভ্রমণে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক। সমুদ্র সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে লাখো পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে । তিল ধারণের ঠাঁই নেই সমুদ্রের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। অতিরিক্ত পর্যটকদের চাপে সকাল থেকে শহরের বাসটার্মিনাল, কলাতলীর ডলফিন মোড়, সুগন্ধা পয়েন্ট, লিংকরোড়, বাজারঘাটা ও লালদিঘির পাড়ে যানবাহনের তীব্র জট লেগে আছে। এদিকে অগ্রীম হোটেল কক্ষ বুকিং না দিয়ে কক্সবাজারে চলে আসায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার পর্যটক। অভিযোগ রয়েছে, পাঁচগুণ বেশি দামে হোটেল রুমের ভাড়া আদায় করারও৷ অধিকাংশ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা চারদিনের সরকারি ছুটি রয়েছে। তাই এ সময়ে অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ থাকবে কক্সবাজারে। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকের চাপ কমে আসবে। তারা আরও বলছেন, প্রতিবছর এই সময়ে কক্সবাজারে বাড়তি পর্যটকের চাপ থাকে৷ এটি স্বভাবিক বিষয়। যারা আগে থেকে হোটেল বুকিং ছাড়া ভ্রমণে আসেন, সে-সব পর্যটককে পোহাতে হয় ভোগান্তি।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক শফিক আহমেদ বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে আমরা পাঁচ বন্ধু কক্সবাজার পৌঁছাই। কলাতলী সৈকতের আশপাশের ৫০টি হোটেল দেখেও একটি রুম পাইনি। পরে নিরুপায় হয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠতে হয়েছে।’
রংপুর থেকে আসা সাকিব নূর বলেন, ‘আমরা প্রায় ৪০ জনের একটি দল বাসভাড়া নিয়ে কক্সবাজার আসি। আসার সময়ও রাস্তায় দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়েছি। আবার এখানে এসে দেখি কোনো হোটেলে রুম নেই। তাই আমরা বাধ্য হয়ে কয়েকঘণ্টা সৈকতের চেয়ার আর রাত ১২টার পরে আমাদের বাসে বসে রাত কাটিয়েছি।’
ময়মনসিংহ থেকে ভ্রমণে আসা পর্যটক দম্পতি জমির উদ্দিন ও পপি আক্তার বলেন, ‘আগে থেকে হোটেল রুম ভাড়া দেওয়া হয়নি৷ তাই এখানে এসে বিপদে পড়ে গেলাম। আগে যে রুম ১ হাজার টাকা দিয়ে অবস্থান করেছিলাম, একই হোটেলে এখন ভাড়া চায় ৬ হাজার টাকা। এটা কিভাবে সম্ভব? খাবারের মান ভালো না হওয়া সত্বেও অনেক খাবারের হোটেল অতিরিক্ত দাম আদায় করছে।’
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক )-এর সভাপতি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এখানকার পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসে চার লাখের বেশি পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে। যে-সব পর্যটক রুম পাননি, তারা আগে থেকে হোটেল রুম বুকিং দেননি বলে এই বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। খাবার হোটেল ও আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘টানা কয়েকদিনের ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। ৫ শতাধিক হোটেলে-মোটেলে কোনো রুম খালি নেই। হোটেলের কক্ষ খালি না পেয়ে অনেকে ছুটছেন শহরের দিকে। অতিরিক্ত দাম আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে যে-সব হোটেলের বিরুদ্ধে পর্যটক অভিযোগ করবেন, প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, ‘রুম ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগটি আমরা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পর্যটক হয়রানি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
/ঢাকা বিজনেস/এনই/