উপ-মহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের জন্মদিন আজ। বেঁচে থাকলে আজক ৯৪ বছরে পা দিতেন তিনি। ১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বৃটিশ-ভারতের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন এই গায়িকা। তার পিতা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর একজন মারাঠি ও কোঙ্কিণী সঙ্গীতজ্ঞ এবং মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। তার মাতা সেবন্তী।
অনেক ছোটবেলা থেকেই গানের চর্চা শুরু করেন লতা। খুব অল্প বয়সেই খ্যাতিও পেয়ে যান। তবে চর্চা কখনো ছাড়েননি তিনি। গানের প্রতি প্রচণ্ড ভালবাসা ও পরিবারের উৎসাহেই প্লেব্যাকে জনপ্রিয় থাকা অবস্থাতেও তিনি সংগীতচর্চা চালিয়ে যান। ১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে একজন পেশাগত কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে দেখতে হয়নি তাকে।
তবে মজার তথ্য হলো গানের আগে অভিনয় দিয়ে শোবিজে যাত্রা করেন লতা। মাত্র ৫ বছর বয়সে লতা প্রথম অভিনয় করেন বাবার নাটকে। যখন ১৩ বছর বয়স, বাবা দীননাথ মারা যান। তখন আশা, ঊষা এবং ভাই হৃদয়নাথ অনেক ছোট। তাদের পারিবারিক বন্ধু মাস্টার বিনায়কের প্রতিষ্ঠানে মারাঠি ছবিতে অভিনয় শুরু করেন শিশুশিল্পী লতা ও আশা।
প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে অসংখ্য হিট সুপারহিট গান তিনি উপহার দিয়েছেন শ্রোতা-দর্শককে। ভারতের ইতিহাসে সর্বাধিক সফল প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে ধরা হয় লতা মঙ্গেশকরকে। নিজের সুরেলা কণ্ঠের মাধ্যমে প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে ১৯৫০ সাল থেকে সারা বিশ্বের শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তিনি। এক হাজারেরও বেশি হিন্দি ছবির গানে তিনি কণ্ঠ দিয়েছেন। হিন্দিসহ প্রায় ৩৬টি ভাষায় গান গেয়েছেন, যা একটি বিস্ময়কর ব্যাপারই বটে।
১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গান গেয়ে লতা মঙ্গেশকরের নাম ওঠে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। এই সময়ে তিনি ২০টি ভাষায় ২৫০০০-এরও বেশি গানে কণ্ঠ দেন। এ রেকর্ডটি ২০১১ সালে ভেঙে দেন তারই ছোট বোন আশা ভোসলে। সংগীতের ইতিহাসে সর্বাধিক গানে কণ্ঠ দেয়ার গৌরব অর্জন করে গিনেস বুক অব রেকর্ড ওয়ার্ল্ডে নাম লেখান আশা। তবে আশা নিজেও তার সংগীতের অনুপ্রেরণা হিসেবে সব সময় বড় বোন লতাকেই মানেন।
আরডি বর্মন, এসডি বর্মন থেকে শুরু করে এখনকার অনু মালিক ও যতিন-ললিতদের মতো সংগীত পরিচালকদের সঙ্গেও সমান তালে কাজ করেছেন লতা।
ভারতীয় প্রথম শিল্পী হিসেবে লতা মঙ্গেশকর লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে অনুষ্ঠান করেন। ১৯৭২ সালে পরিচয় ছবিতে ‘বিতি না বিতাই র্যায়না’ গানের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পান। ১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৭১ সালে পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন তিনি। ২০০১ সালে ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত হন এই কিংবদন্তি।
লতা ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা মুক্তও হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে শারীরিক অসুস্থতায় অবস্থার অবনতি হয়। তিনি ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মুম্বই-এর শিবাজী পার্কে তার অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়।
ঢাকা বিজনেস/এন