২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার



শিল্প-সাহিত্য
প্রিন্ট

রাতের ঢাকা

তাসমিম সুলতানা || ০৯ জানুয়ারী, ২০২৩, ০৮:০১ পিএম
রাতের ঢাকা


খুব ইচ্ছে হলো রেহানার রাতের ঢাকা দেখার। বেড়াতে এসেছে খালার বাসায়। গ্রামের প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠা রেহানার বেশ কয়েকবার ইটপাথরের শহর ছেড়ে পালাতে মন চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। খালার নজরদারির কারণে। 

সাইমুন ভাই তাকে গল্প শুনিয়েছে অনেক। রাতের ঢাকা অনেক সুন্দর। তারা ঝলমলে আলো-আঁধারি ঢাকার রাত অনেকটাই শান্ত, নীরব। 

খালা মনে মনে ঠিক করেছেন, রেহানাকে সাইমনের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে নিজের কাছে রেখে দেবেন। কেননা নিলুফা বেগমের কোনো মেয়ে নেই। দুই ছেলে সাইমন ও মুহায়মিন। বড় ছেলে সাইমন পড়ালেখা শেষে ঢাকায় চাকরি করছে। মুহাইমিন কানাডায় পিএইচডি করছে। বোনের মেয়ে রেহানাকে নিলুফা বেগমের খুবই পছন্দ। বোনের কাছেও গোপন ইচ্ছেটা প্রকাশ করেছেন তিনি। বোন দ্বিমত করেননি।

কাজেই সবকিছুই ঠিকঠাক আছে। এখন ভালো একটা দিন দেখে বিয়ে দিতে হবে। মনে মনে সব পরিকল্পনা করছেন নিলুফা বেগম। রাতে পাশাপাশি হাঁটছে রেহানা ও সাইমন। অনেক গল্পই করেছে দুজনে। কিন্তু ব্যক্তিগত বিষয়ে এখনো কেউ কাউকে প্রশ্ন করেনি। হাঁটতে হাঁটতে হাতির ঝিলের ব্রিজে পৌঁছালো দুজন।

রেহানার দিকে তাকিয়ে সাইমন বললো, দেখেছ, বলেছিলাম না রাতের ঢাকা অনেক সুন্দর! একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করবে। রেহানা নীরব রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললো, সত্যিই সুন্দর রাতের ঢাকা। 

কেন কোনো সন্দেহ আছে তোমার? প্রশ্নাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন সাইমন।

এবার রেহানা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর বললো, না মানে, আরও সুন্দর লাগতো, যদি রাতের ঢাকা দেখতে আসার সময় ফুটপাতে ধুলোমাখা জরাজীর্ণ হাড্ডিসার শরীরগুলো চোখে না পড়তো। কনকনে ঠাণ্ডায় পাতলা কাপড়ে ফুটপাতে শুয়ে থাকতে দেখলাম অসংখ্য নারী, শিশু, বয়স্ক মানুষকে। যারা তোমার রাতের ঢাকার সমস্ত সৌন্দর্য কেড়ে নিয়েছে। 

সাইমন লজ্জিত স্বরে বললো, রেহানা আমি স্যরি। আমি শুধু রাতের ঝলমলে আলো-আঁধারির খেলা দেখেছি। কিন্তু তাদের নিয়ে ভাবিনি কখনো। 

রেহানা বললো, আপনি একা কেন লজ্জা পাচ্ছেন? এ লজ্জা আমার-আপনার সবার। 
কাউকে ভালোবেসেছ কখনো? সাইমন সাহস করে বলে ফেললো রেহানাকে। 
রেহানা মুচকি হেসে বললো, বেসেছি। সাইমন শুকনো গলায় জানতে চাইলো, কাকে? 
রেহানা আবারও মুচকি হেসে বললো, এক গাধাকে।
সাইমনের হার্টবিট বেড়ে গেলো এবার। সে বললো, গাধাটা গ্রামের না শহরের?

রেহানা বুঝতে পারলো টেনশনে সাইমনের কপালে এই তীব্র শীতেও বিন্দু বিন্দু ঘাম।
এবার আর ভনিতা না করে রেহানা ব্রিজের রেলিংয়ে রাখা সাইমনের হাতে হাত রেখে বললো, চলো যাই। 



আরো পড়ুন