৩০ জানুয়ারী ২০২৫, বৃহস্পতিবার



যেভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্ব নেতৃত্বের আসন নিচ্ছে নরওয়ে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || ২৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:০১ এএম
যেভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্ব নেতৃত্বের আসন নিচ্ছে নরওয়ে


পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির অন্যতম সফল উদাহরণ হতে যাচ্ছে নরওয়ে। যেখানে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার প্রায় এক বিপ্লবের পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে দেশটির মোট গাড়ি বিক্রির ৯০ শতাংশই বৈদ্যুতিক হয়ে গেছে।  চলতি বছরের মধ্যে যা শতভাগে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি রাজধানী অসলোতে, বৈদ্যুতিক গাড়ির শোরুম ছাড়া অন্য কোনো বিকল্পই এখন আর নেই। শহরের রাস্তায় প্রায় প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্স প্লেটে ‘B’ চিহ্ন রয়েছে, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির পরিচায়ক।

নরওয়ে, মাত্র ৫৫ লাখ মানুষের একটি ছোট দেশ, বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশকে ছাড়িয়ে দ্রুত এগিয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার। গত বছর দেশটির রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা পেট্রোলচালিত গাড়ি ছাড়িয়ে গেছে। ডিজেল গাড়ি অন্তর্ভুক্ত করলে, মোট গাড়ির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখন বৈদ্যুতিক।

এ বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে সরকারের নিরলস নীতিগত প্রচেষ্টা। ১৯৯০ সালের দশকে, দেশটি পেট্রোল এবং ডিজেলচালিত গাড়ির ওপর কর বাড়ানোর মাধ্যমে সেগুলোকে ব্যয়বহুল করে তোলে। অন্যদিকে, বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর করমুক্ত সুবিধা দেওয়ায় এগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। একদিকে, তেল রপ্তানির শীর্ষ দেশ হয়, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহারেও নরওয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

নরওয়ের পরিবহণমন্ত্রী ক্রোগলান্ডের মতে, ‘আমরা আমাদের লক্ষ্যের কাছে পৌঁছাতে চলেছি। আমার বিশ্বাস, আমরা শিগ্গির সফল হব।’ দেশের লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে পেট্রোল ও ডিজেলচালিত নতুন গাড়ির বিক্রি বন্ধ করা, যা গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনবে। এটি শুধু নরওয়ের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির অগ্রদূত হয়ে ওঠাই নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকেও জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতার চক্র ভাঙার অনুপ্রেরণা দেবে।

নরওয়েজিয়ান ইভি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টিনা বু বলেন, ‘১৯৯০ সালের দশকের শুরুর দিকে নরওয়ে এ পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। তখন থেকেই পেট্রোল এবং ডিজেলচালিত গাড়ির ওপর কর বাড়ানো হয়েছিল, যা এগুলোর দাম বাড়িয়ে তোলে। আর বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর কর ছাড় দেওয়া হয়েছিল, যা সেগুলোকে আরও জনপ্রিয় করেছে।’

এ মডেলটি অন্য দেশগুলোও অনুসরণ করতে পারে, তবে তা অবশ্য তাদের নিজস্ব পরিস্থিতি অনুযায়ী উপযোগীভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। বিভিন্ন দেশ, যেমন যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র, যাদের বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি এখনো যথেষ্ট কম, তারা নরওয়ের মডেল অনুসরণ করে দ্রুত তাদের পরিবহণ খাতের ডিজিটাল বিপ্লব ঘটাতে পারে।

নরওয়ের বৈদ্যুতিক গাড়ি বিপ্লবের চিত্র অনেকটা এমন যে, দেশের ৮৮.৯ শতাংশ গাড়ি বৈদ্যুতিক হয়ে গেলে, আর সেখানে কোনো বিকল্প নেই। এটি পরিবেশ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুফল বয়ে আনবে এবং ভবিষ্যতের জন্য এটি পৃথিবীকে আরও টেকসই করার পথ তৈরি করবে।

নরওয়ের এ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা শুধু তাদের দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পথ প্রদর্শক হয়ে উঠেছে। অন্য দেশগুলোর জন্যও এটি একটি দৃষ্টান্ত, যা পরিবেশের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে বৈশ্বিক পরিবেশ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কপ২৯ জলবায়ু সম্মেলনে সমালোচনার মুখে পড়েছে নরওয়ে। আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে একদল পরিবেশবাদী নরওয়েকে জাতিসংঘ ও রাশিয়ার সঙ্গে একই কাতারে নিয়ে সমালোচনা করে। মূলত আর্কটিক অঞ্চলে নতুন তেল খনন লাইসেন্স দেওয়ার জন্য সরকারের নীতির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে। এ সমালোচনার পাশাপাশি, কিছু পক্ষ মনে করছেন, সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে আরও ত্বরান্বিত পদক্ষেপ নিতে পারে। বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রী স্টোরের সরকারের সমর্থক বামপন্থি দল ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির ওপর অতিরিক্ত কর ছাড়ের দাবি জানিয়েছে। তবে এসব প্রতিবাদ ও প্রস্তাবের পরও, নরওয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিপ্লবের ক্ষেত্রে বিশ্বে অগ্রণী অবস্থান বজায় রেখেছে।



আরো পড়ুন