ঈদ মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোমেশিন নির্ভর কারখানাগুলোতে প্রতিদিন কয়েক হাজার জোড়া জুতা উৎপাদন হতো। অথচ এবার ঈদ মৌসুমেও অলস পড়ে আছে এসব কারখানার কার্যক্রম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত কেমিক্যাল সংকটের কারণে পাদুকা কারখানাগুলোতে এখন হতাশার চিত্র। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। বেকার হয়ে আছে প্রায় সাত হাজার শ্রমিক। বিশেষ করে রমজান এলে বাড়ে তাদের কাজের চাপ। তবে গেল দু’ সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় কেমিক্যাল সংকটে ধুঁকছে কারখানাগুলো। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। হাতেগোনা যে এক-দুটি চলছে সে-সবেরও রসদ ফুরিয়ে আসায় ২/৩ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে উৎপাদন।
কারখানা মালিক রফিক আহমেদ বলেন, ‘‘মূলত আমদানি করা কেমিক্যাল চট্টগ্রাম বন্দরে আটকে আছে। বারবার আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগযোগ করা হলেও ‘দেবো-দিচ্ছি’ বলে আর দিচ্ছে না। কেমিক্যাল না পাওয়ায় আমাদের প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
সেভেন স্টার কারখানার মালিক মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘বছরে আট মাস কাজের চাপ না থাকলেও রমজান আসার ঠিক ১৫ দিন আগে থেকে কাজের চাপ বেড়ে যায়। জুতার সব উপকরণ থাকলেও কেমিক্যালের অভাবে তৈরি করা যাচ্ছে না। এতে আমাদের ব্যবসায়ীদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি শ্রমিকরাও সংকটে পড়েছেন।’
সরেজমিন অটোমেশিন পাদুকা কারখানাগুলোতে দেখা গেছে, কর্মচাঞ্চল্যের কোনো পরিবেশ নেই। শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। জুতার সব উপকরণ তৈরি করে রাখলেও কেমিক্যালের অভাবে ফিটিং করতে পারছেন না।
একাধিক শ্রমিকরা বলেন, ‘সারাবছর কাজ করে যা আয় করি, আমাদের তিন মাসে কাজের সিজনে তার দ্বিগুণ টাকা পাই। যা দিয়ে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হয় না। এবারের মৌসুমে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। টানা ১৫ দিন কাজ নেই। এখন আমাদের মালিকই চলবে কিভাবে, আর আমরা বেতনই পাবো কিভাবে? জুতার পিউর কেমিক্যালের অভাবে আমাদের কাজ বন্ধ রয়েছে।’
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিউ ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমানউল্লাহ বলেন, ‘২৬ টি অটোমেশিন কারখানায় দুই সপ্তাহ ধরে কেমিক্যালের অভাবে কাজ বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারাও বেকার অবস্থায় রয়েছেন। তাদের কোনো কাজ দিতে পারছি না। কবে নাগাদ কেমিক্যালের সরবরাহ মিলবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। সংকট সমাধানে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। দ্রুত কেমিক্যালের ব্যবস্থা করে দিলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন।’
/ঢাকা বিজনেস/এনই