১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার



কক্সবাজারে এক বছরের উন্নয়ন পরিক্রমা

কক্সবাজার করেসপন্ডেন্ট || ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০১:৪২ পিএম
কক্সবাজারে এক বছরের উন্নয়ন পরিক্রমা


২০২৩ সালের পুরো বছরজুড়ে নানা বিষয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল কক্সবাজার। সরকারের সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার ৭২টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের মধ্যদিয়ে বদলে গেছে কক্সবাজারের চিত্র। কক্সবাজারের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর সবখানে লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। পাশাপাশি পাল্টে গেছে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। দেশের অন্যান্য জেলা তুলনায় কক্সবাজারে বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন।

২০২৩ সালে কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রকল্প


ঢাকা-কক্সবাজার রেল সংযোগ

উন্নয়নের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল রেললাইন প্রকল্প। এর মাধ্যমে স্বপ্নপূরণের সুযোগ পেয়েছে সমুদ্র নগরী কক্সবাজারের মানুষ। গেল বছরের (১১ নভেম্বর) ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল লাইন ও নান্দনিক আইকনিক রেলস্টেশনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।

মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর চ্যানেল

দেশের প্ম ও একমাত্র গভীর সমুদ্র বন্দর স্থাপনের জন্য ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রাক্বলিত ব্যয়ে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।মাতারবাড়ি টার্মিনাল বাস্তবায়িত হলে ১৬ মিটার বা ততোধিক গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে মাইলস্টোন হিসেবে কাজ করবে। এখানে বড় ধরনের ফিডার ভেসেল আসবে। এতে অর্থ ও সময় বাঁচবে।

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের লক্ষে ৩৫০ মিটার প্রশস্ত ও ১৬ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।সএছাড়া অ্যাপ্রোচ চ্যানেলের উত্তর পার্শ্বে ২ হাজার ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও দক্ষিণ পার্শ্বে ৬৭০ মিটার দীর্ঘ ব্রেক ওয়াটার (ঢেউ নিরোধক বাঁধ) নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

 মাতারবাড়ি কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে মাতারবাড়ীর ১ হাজার ৬০০ একরের পরিত্যক্ত লবণ মাঠে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ধারণক্ষমতার এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা দিচ্ছে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিডেট। গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবাড়ীর আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।

লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ

 বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা কক্সবাজার সদরের খাল লাইনিং অ্যাপ্রোচ রোড ও ব্রিজ এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ৪টি প্রকল্প। যেখানে রয়েছে ৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে নির্মিত কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল ঠাণ্ডা চৌকিদার পাড়ার ৬০ মিটার সিসি গর্ডার ব্রিজ, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চকরিয়া বাস টার্মিনাল সম্প্রসারণ প্রকল্প, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প, আর সাড়ে ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে গোরকঘাটা সড়ক প্রস্তুতকরণ।

বিদ্যালয় নির্মাণ

এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ৪টির মধ্যে রয়েছে ৩ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে কক্সবাজার সদরের জাহারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, সাড়ে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে মহেশখালীর ইউনুসখালি নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উখিয়ার রত্নাপালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও মারিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন।

ছাদখোলা বাস 

 প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রামু কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করা হয় এই বছর। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য দুটি ছাদখোলা বাস উদ্বোধন করা হয়।

শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার

৬৭ কোটি টাকার টেকনাফ মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার রিসিলেন্ট শেল্টার কাম আইসোলেশন সেন্টার, রামুর নন্দাখালী ১৮৪ মিটার আর্চ আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস ফর টুরিস্ট।

‘কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতু

কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কস্তুরাঘাট সংলগ্ন বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে ‘কক্সবাজার-খুরুশকুল’ সংযোগ সেতু। দীর্ঘ ‘প্রিস্টেইট বক্স গার্বার সেতু’। দীর্ঘ ৫৯৬ মিটারের এ সেতুর জন্য ব্যয় হয় ২৫৯ কোটি টাকা। সেতুটির আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের গত ১ সেপ্টেম্বর। এটি ২০২১ সালের ২১ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও নানা জটিলতায় শেষ হতে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত লেগে যায়।

রানওয়ে সম্প্রসারণ

কক্সবাজার শহরের উত্তর দিকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে এখানে রানওয়ে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। 


সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবল

সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়ায় লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবল , এতে দ্বীপের মানুষের ৫৩ বছরের স্বপ্ন পূরণ হলো। অন্যদিকে মহেশখালীর মাতারবাড়ি, ধলঘাটায় কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন, এলএনজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণকাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধন। এছাড়াও চলমান রয়েছে ধলঘাটা ইকোনমিক জোন প্রকল্পের কাজ এবং সোনাদিয়া দ্বীপে পরিবেশ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে চলছে ইকো-ট্যুরিজম পার্কের কাজ৷ এইসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে মহেশখালী হবে দেশের অন্যতম গেম চেঞ্জার।



আরো পড়ুন