একরাতে ৩ ঘণ্টার আগুনে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের রোলিং মিল কুনিপাড়া বস্তির প্রায় ৪০০ ঘর পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, সোমবার (১৩ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে আগুন লাগে। এরপর রাত সাড়ে ১০ টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করেন। এরপর তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর রাত সাড়ে ৪ টায় আবারও আগুন লাগে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরু গলি ও ঘনবসতির কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। একই কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতেও বেগ পেতে হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা যে রিজার্ভ পানি এনেছিলেন, তা দিয়ে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এছাড়া, সরু গলির কারণে ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে সমস্যা হয়েছে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। পরবর্তী সময়ে হাতিরঝিলসহ ও আশেপাশের জলাধার থেকে পানি সংগ্রহ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা-ভ্যানচালক আলমগীর ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘এখানে একটা তিন তলা বাড়ির নিচ তলায় রঙের ডিব্বা পরিষ্কার করে বিক্রি করে। এই কাজে কেরোসিন ব্যবহার করা হয়। রঙ এমনিতেই এসিড। আমার ধারণা কেরোসিন ও রঙের পাশে থাকা ঝুট কাপড় থেকে আগুন লেগেছে।’ তিনি বলেন ৫ থেকে ৬ জন আহত হয়েছেন। কেউ নিহত হননি।’
প্রত্যক্ষদর্শী জামিল। চা, পান বিক্রি করেন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসকে আমরা অনেক অনুরোধ করেছি, ধোঁয়া পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি। ধোঁয়া পুরাপুরি নিয়ন্ত্রণে না এনেই তারা প্রথমে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।’
বস্তিবাসী গৃহিণী শাহনাজ ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সমিতি থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলেছিলাম। কিছু টাকা খরচ করেছি। বেশিরভাগ টাকা ঘরেই ছিল। সব পুড়ে গেছে।’
স্থানীয় কাউন্সিলর শফিউল্লাহ্ শফি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কেমিক্যাল থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এখানকার অধিকাংশ বাড়ির মালিক এখানে থাকেন না। তারা মাসে বা ৬ মাসে আসেন।’ তিনি আরও বলেন, আগুনে ৬টা বাড়ি পুড়ে গেছে। প্রায় ৪০০ ঘর পুড়ে গেছে।’
উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণকারী তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র অফিসার দেওয়ান মোহাম্মদ রাজীব ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘আমরা প্রায় ৮ঘণ্টা কাজ করেছি। এই ধরনের আগুন নেভানোর পরেও ধোঁয়া উঠতে পারে। এটা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অনেক সময় আগুন নিভে গেলেও অঙ্গার থাকে। সেখান থেকে মূলত ধোঁয়াটা উঠছে।’
ফায়ার সার্ভিস ঢাকা অফিসের সহকারী পরিচালক আক্তারুজ্জামান ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘কোথাও আগুন জেনারেট হলে ধোঁয়া থেকে যায়। এই ধোঁয়া থেকে আগুন আর বাড়বে না। তারপরও আমরা বিষয়টি দেখছি। আমাদের লোক ঘটনাস্থলে আবারও যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষক্ষতির পরিমাণ এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তদন্ত টিম গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। তদন্ত টিম তদন্ত রিপোর্ট দিলে বোঝা যাবে কত ক্ষতি হয়েছে আর কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটপন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত কিভাবে আগুন লেগেছে, তা বলা যাবে না। আমাদের তদন্ত টিম কাজ করছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর আগুন লাগার কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণসহ সামগ্রিক বিষয়ে জানা যাবে।’
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমাদের মনে হয়েছে, চিপা গলি, ঘনবসতির কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। ’
ঢাকা বিজনেস/এনই/