১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার



লাইফ স্টাইল
প্রিন্ট

মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াবেন যেভাবে

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ০২:০২ পিএম
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াবেন যেভাবে


'কলমটা যেন কোথায় রাখলাম?', 'ফ্রিজ থেকে কি নিতে আসলাম?', 'মানুষটাকে কোথায় যেন দেখেছি!' প্রায়ই আমরা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। আবার অনেকেই আছেন, যারা পড়া মনে রাখতে পারেন না। অর্থাৎ, স্মৃতিশক্তি নিয়ে অনেক অভিযোগ। বয়স বাড়ার সঙ্গেও আবার স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে।  

তবে, স্মৃতিশক্তি আসলে অনেকগুলো বিষয়ের সাথে জড়িত। কোনো বিষয় নিয়ে বারবার চিন্তা করলে, শারীরিকভাবে গুরুতর অসুস্থ থাকলে,কোন ট্রমার মধ্যে দিয়ে গেলে, মস্তিষ্কে আঘাত পেলে, একসঙ্গে অনেক তথ্য মুখস্থ করার চেষ্টা করলে, কোনো মানসিক সমস্যা থাকলে যে কেউ পুরনো অনেক কথা মনে করতে পারেন না বা অনেক কিছু ভুলে যান। দৈহিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণে নতুন বিষয় মুখস্থ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখস্থ করা বিষয়ও মনে পড়ে না। কেউ যখন কোনো মানসিক চাপে থাকে, তখন মস্তিষ্ক থেকে কর্টিসোল নামক এক ধরনের নিউরো ট্রান্সমিটার ক্ষরণ হয়। স্মৃতি থেকে কোনো তথ্য পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এটি।

ভুলে যাওয়ার সমস্যা থেকে বাঁচতে অর্থাৎ, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে প্রয়োজন একটু নিয়মমাফিক চলা। কিছু বিষয় মেনে চললে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। জেনে নেওয়া যাক কিছু উপায়: 

১. স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এমন খাবার খাওয়া 

স্মৃতিশক্তির সঙ্গে খাদ্যের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । কিছু খাবার যেমন, ওমেগা-3 এসিড মস্তিষ্ক ও স্নায়ুকোষ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই ওমেগা-3 পাওয়া যায় চর্বিযুক্ত মাছে। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন একমুঠো বাদাম,কুমড়ার বীজ বা ব্লুবেরি। তেলজাতীয় খাবারও মস্তিষ্কের জন্য ভালো। আবার, কিছু কিছু খাবার মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন,  চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মাখন, লাল মাংস, ফাস্টফুড, লবণ ইত্যাদি। স্মৃতি-সংক্রান্ত সমস্যা দূর করতে এসব খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি ।

২. ব্যায়াম ও মেডিটেশন

 শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম অপরিহার্য। তবে ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের আকারও বাড়ে। ব্যায়াম মস্তিষ্কে কোষের সংখ্যা বাড়ায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ বাড়ে।  এ জন্যই পড়া মুখস্থ না হলে অনেক সময় হাঁটতে হাঁটতে পড়তে দেখা যায়। তখন সহজেই সেটি মনে থাকে। খোলা জায়গায় ব্যায়াম করতে হবে। এতে মস্তিষ্ক ভিটামিন ডি–ও পাবে। এছাড়া মেডিটেশন মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। চিন্তার ফোকাস ঠিক রাখে।  

৩. বেশি রাত না জাগা

কম ঘুমানো মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। রাত জেগে পড়াশোনা করা বা ইন্টারনেটে ডুব দেওয়া অনেকেরই অভ্যাস। ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায়। লম্বা সময় মস্তিষ্ককে ঘুম থেকে বঞ্চিত করা হলে মস্তিষ্কের কোষের ধ্বংস হওয়ার হার বেড়ে যায়। অনেকেই ঘুমানোর সময় মাথা ঢেকে রাখেন। কিন্তু ঘুমানোর সময় মাথা ঢেকে রাখলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের কেন্দ্রীকরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে, অক্সিজেনের কেন্দ্রীকরণের পরিমাণ কমে যায়। এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমানোর অন্যতম কারণ। এছাড়া, অসুস্থ অবস্থায় কঠিন কাজ করলে বা পড়াশোনা করলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই, অসুস্থ অবস্থায় কাজ করা যাবে না। 


৪. মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত রাখা

বিভিন্ন নতুন নতুন বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করার সবচেয়ে সেরা উপায়। চোখ-কান খোলা রাখলে চারপাশ থেকেই আমরা প্রচুর চিন্তার খোরাক পেতে পারি। উদ্দীপিত বা জাগিয়ে তোলার মতো ভাবনার অভাব মস্তিষ্ককে সঙ্কুচিত করে। বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় অংশগ্রহণ মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। 

৫. অনেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পড়া মনে থাকে না বা ভুলে যান। পড়া মনে রাখার জন্য অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করতে পারেন। 

       ক. কোনো তথ্য মুখস্থ করার ক্ষেত্রে নীরবে পড়ার চেয়ে সরবে পড়া  ভালো।  সরব পাঠের একটি বিশেষ সুবিধা হলো, এর ফলে চোখ ও কান এই দুটি ইন্দ্রিয় সমানভাবে কাজ করে। যদি কোনো কিছু শব্দ করে পড়া হয়, তাহলে মনে রাখা সহজ হবে। এছাড়া, ছন্দ ও সুরের মাধ্যমে পাঠ করলে তা সহজে মুখস্থ হয়।

       খ. নির্দিষ্ট কোনো পড়া মুখস্থ করার সময় মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে পড়লে পড়া দীর্ঘদিন মনে থাকে। তাই, পড়তে বসলে মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হবে। 

        গ. অর্থ বুঝে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। এতে মুখস্থ হওয়ার পরও ওই পাঠ দ্রুত ভুয়ে যায় না। অর্থ না বুঝে পড়লে মুখস্থ  হওয়ার পর বেশি দিন মনে রাখা যায় না।  

        ঘ. পড়ার সময় ঠিক করে একটা রুটিন তৈরি করতে পারেন। রুটিন অনুযায়ী পড়লে পড়া দীর্ঘদিন মনে থাকবে। 

       ঙ. অনেকেই পড়তে বসলে এলোমেলোভাবে পড়েন। কিন্তু, এলোমেলোভাবে পড়লে কোনো পড়াই সহজে মনে থাকে না। তাই, সুন্দরভাবে সাজিয়ে পড়ার অভ্যাস করতে হবে। 

        চ. ঘুমাতে যাওয়ার আগে কোনো পড়া মুখস্ত করলে তা অনেকদিন মনে থাকে। কারণ, রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে স্মৃতি সংরক্ষণের একটা বড় কার্যক্রম চলে। তাই, ঘুমানোর আগে মুখস্ত করা জিনিস বা ভাবনা, সহজেই মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করে। 

        ছ. স্মৃতিশক্তি বাড়াতে গভীর মনোযোগ একটি শর্ত হিসেবে কাজ করে। গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়লে তা সহজেই মনে রাখা যায়। 

        জ. কোনো কিছু মনে রাখার ক্ষেত্রে বা মুখস্থকরণে রবিনসনের Survey Q 3R পদ্ধতি একটি যুগান্তকারী নিয়ম। এখানে, Survey মানে জরিপ করা, Q মানে Question (প্রশ্ন করা)। আর 3R মানে Read,Recite ও  Review। অর্থাৎ, পড়া, আবৃত্তি ও পর্যালোচনা। শিক্ষার্থী প্রথমে বিষয়বস্তু সম্পর্কে জরিপ করবে। এরপর, নিজে নিজেকে প্রশ্ন করবে। আবার, নিজেই সে প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করবে। পড়ার সময় আবৃতি করে পরবে। পড়া শেষে তা আবার মনে করার চেষ্টা করবে। এভাবে একজন শিক্ষার্থী সহজেই কোনো বিষয়কে দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারবে। 

        ঝ. কোন তথ্য মুখস্থ করতে এবং অনেকদিন মনে রাখার ক্ষেত্রে সংক্ষেপণ বা মনেমোনিক্স প্রক্রিয়াও অবলম্বন করতে পারেন। অনেকগুলো শব্দের প্রথম অক্ষর দিয়ে ছোট একটি শব্দ তৈরি করতে পারেন। ছোটবেলায় শেখা 'বেনীআসহকলা' এর একটি উদাহরণ।  

যা করবেন না

শরীরের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ মস্তিষ্ক। এ কথায় সন্দেহের অবকাশ নেই । সবাই চায়, মস্তিষ্কের ক্ষমতা ক্ষুরধার থাকুক। তাই মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো কী কী, এবার তা জেনে নিন এবং সচেতন হোন। অনেকেই সকালের নাস্তা সময়মতো খান না অথবা একেবারেই খান না। একসময় এটাই অভ্যাসে পরিণত হয়। যারা সকালের নাস্তা খায় না বা কম খায়, তাদের রক্তে চিনির পরিমাণ কমে যায়। এতে মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছাতে পারে না। ফলে মস্তিষ্কের কাজের ক্ষমতা কমে যায়। আবার দেখা যায়, অনেকেই নিজেদের খাওয়া কন্ট্রোল করতে পারেন না। ফাস্টফুডসহ প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া আর ব্যায়াম না করা আজকের জীবনের সাধারণ চিত্র। বেশি খাওয়ার ফলে ব্রেইনের অ্যার্টারিগুলোয় চর্বি জমে শক্ত হয়ে যায়। ফলে মানসিক ক্ষমতা কমে যায়। অনেকেই ঘুম না হলে ঘুমের ওষুধ খান। ঘুমের ওষুধ মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ ঘুমের ওষুধ। তাই, ঘুমের ওষুধ পরিহার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। অনেকেই আবার মানসিক চাপে ভোগেন। কিন্তু, চাপমুক্ত জীবনযাপন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই, চেষ্টা করুন মানসিক চাপমুক্ত থাকতে।

ঢাকা বিজনেস/এন/



আরো পড়ুন