চুপচাপ শীতে
অরণ্য বলল ডেকে:
‘নদীতে ভাসিয়ে দাও—পৃথিবীর জরা’;
ঋতুর ভেতর দিয়ে যেতে যেতে সব মুখরতা
একদিন পৌঁছে যাবে চুপচাপ শীতে;
শুধু, এই ধুলোর শহরে; অনন্ত জিজ্ঞাসা—
সুললিত কণ্ঠে কে পাঠায় স্বেচ্ছামৃত্যুর ডাক?
যাপনের সংঘাতে আমার দ্বিধা নেই;
রঙিন স্বপ্নসমূহ একপাশে রেখে নির্জনের পথে
হেঁটে যেতেও নেই আড়ষ্ঠতা; যখন—
সমস্ত প্রহ্লাদ, ব্যক্তিস্বার্থ, ভাগ হয় গভীর প্রজ্ঞায়!
দেখো, নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি ব্যক্তিগত খরা
বিরান প্রান্তরে ঘর; উঁচু-নিচু, স্বপ্নহীন সব সংস্কার;
ভাঙা সাম্রাজ্যের স্মৃতিগুলো কৌমসুখে আছে বেশ
বিস্ময় নেই, অবশিষ্ট নেই কোনও হাহাকার;
তবুও এই চুপচাপ শীতে—
কোন্ দৃশ্যে প্রশ্নশীল—ওহে ধীরতমা?
খেরোখাতা : ডিসেম্বর ১৪
[প্রথম সর্গ]
কলম থামেনি বলে বেয়নেট কাঁধে হেঁটে আসে
রায়েরবাজার, বনবাঁদাড় পেরিয়ে একান্ত নির্জন—
কারা যেন ঘোড়াগুলো লুকিয়ে রাখে তবুও
ডায়েরির ভাঁজে; রাত পোহাতেই চমক!
আমাদের বক্ষপিঞ্জরে সহস্র হ্রেষাধ্বনি—
হলুদ-বারুদে ঠাসা অঘ্রাণের ক্ষেত, স্বদেশের;
[দ্বিতীয় সর্গ]
এখনো গভীর রাতে কেঁপে ওঠে রাজপথ
অলিগলি হেঁটে জনমতে উঠে আসে তারা
জনান্তিকের শিশিরে ডুবিয়ে পঞ্চাশোর্ধ পা
মুখ লুকায় আদর্শের মলিন কম্বলে—
ফিরে এসো লালবৃত্ত, বিরঞ্জিত শ্যামল-সবুজ
দেখা হোক ফের বিশীর্ণ ঘাসের বনে;
[তৃতীয় সর্গ]
একান্ন'র মিনার বেদীতে দাঁড়িয়ে আছি একা
ভরে উঠছে সময়ের ডালি অক্ষমতার ফুলে!
আলো
যা-কিছু তামাদি, একান্ত আঘাতে গোপন
তার থেকে কিছু আলো তুলে নিতে চাই
গোধূলির আকাশের মতো বাল্মিকীপ্রবণ
সে-আলো, ক্ষীপ্র সন্ধ্যার মতো অনুজ্জ্বল!
সে আলো ছড়িয়ে দিও মুখে ও চিবুকে
অনিমেশ রাত্রি নেমে এলে ঘূর্ণ্যমান চোখে
বিনিময় ছাড়া ম্লান দিনের ঘোরে, অপ্রেমে
আশা ভঙ্গের পরও জেগে থাকা স্বপ্নকুশলে।