১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার



বাঁচতে এসেই প্রাণ হারাচ্ছে অতিথি পাখিরা

তানভীর আহমেদ, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) || ১৯ জানুয়ারী, ২০২৩, ১২:০১ পিএম
বাঁচতে এসেই প্রাণ হারাচ্ছে অতিথি পাখিরা


শীতপ্রধান দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তুষারপাত ও শৈত্য প্রবাহ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মাইল  পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি বছরেই আসে বাংলাদেশের টাংগুয়ার হাওরওসহ বিভিন্ন হাওরে আসে অতিথি পাখিরা। কিন্তু এখানে এসেও জীবনের নিরাপত্তা পাচ্ছে না অতিথি পাখিরা। প্রতিদিনেই হাওরের স্থানীয় শিকারিরা পাখি ধরে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছেন।

টাংগুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত ও ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত বয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে এক হাজার ৮৫৫ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী। টাংগুয়ার হাওরে প্রায় ২১৯ প্রজাতির পাখির অবস্থান ছিল। এর মধ্যে ৯৮ প্রজাতির পরিযায়ী, ১২১ প্রজাতির দেশি। ২২ প্রজাতির হাঁসজাত পাখির বিচরণ করতো।  পরিযায়ী পাখির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো, বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, মৌলভীহাঁস, পিয়ারী, কাইম, রামকুড়া, মাথারাঙ্গা, বালিহাঁস, লেঞ্জা, চোখাচোখি, বেগুনি কালেম প্রভৃতি। এখন এসব পাখি নেই বললেই চলে।

এর কারণ হিসেবে পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, এক শ্রেণির অসাধু শিকারি ও ব্যসায়ী নির্বিচারে পাখি নিধনের কারণে দিন দিন এই পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এছাড়া, হাওরের নানা প্রজাতির জলাবন, হিজল, নলখাগড়ার বিলুপ্তি, ইঞ্জিনচালিত মেশিনের শব্দ এবং রাতের মাছ ধরার জালসহ বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ দিয়ে অতিথি পাখি শিকার করাও অন্যতম কারণ।

টাংগুয়ার হাওর ও হানিয়া কলমা হাওর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিকারিরা বিভিন্ন ধরনের কারেন্ট জাল ও ফাঁদ দিয়ে পাখি শিকার করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইননুসারে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাওর পাড়ের সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক জসিম মিয়া জানান, বাড়িতে রাতে ঘুমানোর আগে আকাশে পাখিদের ওড়ার শো শো শব্দ এখন আর শোনা যায় না। কারণ এবার পাখি কম এসেছে। এর মধ্যেই পাখি শিকার হচ্ছে। আগে বোরো জমির চারা রোপণ করে পাখি পাহারা দিতে হতো, এখন এমন হয় না। পাখি শিকারিরা রাতে বিভিন্ন জাতের পাখি শিকার করে মধ্যনগর কমলাকান্দা নেত্রকোনা ও রাজধানী ঢাকায় বস্তায় ভরে পাচার করছেন।

পরিবেশবিদরা বলছেন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। না হলে টাংগুয়ার হাওর তার সৌর্ন্দয হারাবে। 

টাংগুয়ার হাওরে আগত পর্যটক শাহাদাত হোসেন জানান, শীতে কষ্ট সহ্য করে এলাম পাখি দেখতে। কিন্তু পাখির দেখা পেলাম না। পাখি অভয়ারণ্যে পাখি সংখ্যা কম।’

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, ‘টাংগুয়ার হাওরে অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন