১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার



ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ, দুশ্চিন্তায় জেলেরা

জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট || ২০ আগস্ট, ২০২৩, ০৬:৩৮ এএম
ভরা মৌসুমেও মিলছে না ইলিশ,  দুশ্চিন্তায় জেলেরা


ভরা মৌসুমেও বাগেরহাটে দেখা মিলছে না ইলিশের। ফলে জেলেরা খরচের টাকা তুলতে না পেরে মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। আর মহাজনরা বলছেন, ইলিশ না মেলায় মাছের আড়ৎ চালানোই কঠিন পড়েছে। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন জেলে-মহাজনরা পেশা পরিবর্তনের চিন্তাভাবনা করছেন।

সরেজমিনে বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, ‘আগের মতো ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাক নেই। এ বাজারে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, চাহিদার তুলায় তার পরিমাণ খুবই কম। শনিবার কেবি বাজারের আড়তগুলোতে এক কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম  ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায। আর ২৫০ গ্রাম থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত।’

বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে আফজাল মোল্লা বলেন, ‘মোগো জাইল্লাদের অবস্থা ভালো না। কয়েকদিন আগে গেলো ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। ওই সময় ভারতের জাইল্লারা সব মাছ ধইরা লইয়া গেছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে ঝড়-তুফান মাথায় লইয়া সাগরে গেছিলাম ইলিশ না পাইয়া খালি হাতে ফেরত আইতে হইছে। মোরা যে ট্যাহা খরচ কইরা সাগরে গেইলাম তার অর্ধেক টাকাও উডাইতে পারিনি। সামনে আবার ২১ দিনের নিষেধাজ্ঞা আসচ্ছে। মোগো এহন এই মাছ ধরার কাজ বন্ধ দেওন ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’  

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার জেলে বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘২৫ বছর ধরে মাছ ধরছি। এ বছরের মতো কম মাছ কখনো পাইনি।  মাছ ধরে ভারতের জেলেরা সাথে চট্টগ্রামের বড় বড় ট্রলার। অমরা ছোটখাটো জেলেরা খালি হাতেই ফিরে আসছি সাগর থেকে।  অন্য অঞ্চলের জেলেদের ট্রলারে এক ধরনের মেশিন থাকে, যা দিয়ে কোথায় ইলিশ মাছ রয়েছে, তা শনাক্ত করা যায়। ওই মেশিন দিয়ে তারা সব মাছ ধরে নিয়ে যায়।’ 

বাগেরহাট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘বাগেরহাট জেলায় জেলে রয়েছেন ৩৯ হাজার ৬২৭ জন। এর মধ্যে ইলিশ ধরার জন্য নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১৩ হাজার। তবে বেসরকারি হিসাবে সাগরে ইলিশ আহরণে জন্য প্রতি মৌসুমে সাগরে যায় প্রায় ৩০ হাজার জেলে।’

বাগেরহাট কেবি বাজার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. আবেদ আলী বলেন, ‘গত এক সপ্তারে কেবি বাজারে ট্রলার এসেছে ৭ থেকে ৮টি। ওই ট্রলারগুলোতে ইলিশ ছিল মাত্র দুই টনের মতো। যা খুবই সামান্য। আমাদের দাদনের টাকাই ওঠাতে পারছেন না জেলেরা। সব মিলিয়ে জেলে ও মহাজনরা খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছেন। আমাদের কেউ কেউ পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন।’

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম. রাসেল বলেন, ‘বাগেরহাটের জেলেরা মূলত প্রযুক্তিগত সহায়তা না নিয়ে সাগরে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন। কারণ এই এলাকায় অন্য এলাকার জেলেরা এসে ইলিশের ঝাঁক চিহ্নিত করার জন্য সোনারা নামের একধনের যন্ত্রের ব্যবহার করছেন। এ কারণে তারা সাগরে ভালো মাছ পাচ্ছেন। অথচ বাগেরহাটের জেলেরা এখনো সেই পুরনো পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। তারা ধারণা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সাগরে মাছ ধরেন। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না। এখনই সময় এসেছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইলিশ ধরার জন্য জেলে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করছি।’

ঢাকা বিজনেস/এনই



আরো পড়ুন