১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার



অর্থনীতি
প্রিন্ট

বগুড়ার দইয়ের জিআই স্বীকৃতি নিয়ে যা বললেন ব্যবসায়ীরা (ভিডিও)

সাব্বির আহমেদ সাকিল (বগুড়া) || ০৮ জুলাই, ২০২৩, ১১:৩৭ এএম
বগুড়ার দইয়ের জিআই স্বীকৃতি নিয়ে যা বললেন ব্যবসায়ীরা (ভিডিও)


প্রায় আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দইয়ে নতুন করে মাইলফলক সৃষ্টি হলো। বিখ্যাত এই সরার দই অর্জন করেছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই)। এরফলে জেলার দই ব্যবসায়ীরা নতুন সম্ভাবনার আলো দেখছেন। তারা বলছেন, গন্তব্যের শেষ এখনি নয়। বিশ্ববাজারে বগুড়ার দই তুলে দিতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বগুড়ার দই ব্যবসারী।  

গত ২৬ জুন এক সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) যাচাই-বাছাই শেষে বগুড়ার দইকে জিআই হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিল্লুর রহমান তথ্যটি নিশ্চিত করেন। 

বগুড়ার দইয়ের জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে উল্লসিত জেলার ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এই স্বীকৃতি নিয়ে কাজ চলছিলেন তারা। অবশেষে সেই স্বীকৃতি মিলেছে। ফলে বগুড়ার দই শিল্পটির নতুন দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল বাশার চন্দন বলেন, দইয়ে জিআই স্বীকৃতি পাওয়া আমাদের জন্য ‘গ্রেট অপরচুনিটি’। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় দই রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা বহুমুখী সুবিধা পাবো। কিন্তু এই দইকে বিশ্ববাজারে নিতে হলে সরকারের সহযোগীতার প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, ‘দইয়ে সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকে। এটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে হয়। তা না হলে দইয়ের স্বাদ ও মান পাওয়া যাবে না। তাই দই শিল্পকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিতে দ্রুতগতির পরিবহণ ব্যবস্থা জরুরি। ঢাকায় নিয়ে পাঠাতে গেলে অনেক সময়ের ব্যাপার। সেক্ষেত্রে আমাদের বগুড়ায় আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর খুবই প্রয়োজন।’

নুরুল বাশার চন্দন আরও বলেন, ‘কয়েক বছর আগে বগুড়ার সৈয়দ আহম্মেদ কীরণ নামে সিআইপি পদমর্যাদার এক ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে এক ট্রাক দই কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছিল সেই দই। আমরা বিশ্বাস করি বিশ্ব বাজারে আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। এখন বিমানবন্দর, ইপিজেড ব্যবস্থা পেলে সেই আউটপুট দিতে পারবো।’

বগুড়ার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া হোটেল ও গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল বলেন, ‘জিআই স্বীকৃতির প্রক্রিয়া বেশ কয়েক বছর আগে শুরু হয়েছিল অবশেষে আমরা এটি পেয়েছি। দই অনেক জায়গায় তৈরি হয়। কিন্তু বগুড়ার দই আবহাওয়া ও পানির কারণে সব দিক থেকে আলাদা। যেটি অনেকে জানেন না। জিআই স্বীকৃতির কারণে বিশ্বে বগুড়ার দইয়ের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হলো।’

বাণিজ্যিকীকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বগুড়ার শহর ও শেরপুর উপজেলা মিলে দিনে অন্তত এক লাখ পিস দই বিক্রি হয়। টাকার অঙ্কে প্রায় ১ কোটি হবে। এখন থেকে রপ্তানি হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের রাজস্ব আয় বাড়বে।’

হাসান আলী আলাল আরও বলেন, ‘আমরা খোঁজ খবর করেছি, ফুল এসি কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনায় দই দেশের বাইরে পাঠানো সম্ভব। জাহাজে পাঠানো যায়, বিমানে হলে সবচেয়ে ভালো হয়।’ 

ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা অল্প কিছুদিন হলো জিআই স্বীকৃতি নিয়ে কাজ করছি। আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য হলো কোনো পণ্য কোনো নির্দিষ্ট এলাকার বলে চিহ্নিত করা। এতে এর বৈশ্বিক স্বীকৃতি মেলে। আরেকটি উদ্দেশ্য জিআইয়ের মাধ্যমে পণ্যটির বাণিজ্যিকীকরণের পথ সুগম করা। পণ্যটি যখন বিদেশে পাঠানো হয়, তখন জিআই স্বীকৃতি পণ্যের মান ও দাম নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।

স্বীকৃতি মেলার পরও এখনও অনেক কাজ আছে উল্লেখ করে মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন ইউজার রেজিস্ট্রেশন করার প্রক্রিয়ায় যাবো। আর একটা কমন লোগো হবে আমাদের। এটি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো পাবে। লোগোর কাজ চলছে। এটি হয়ে গেলে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যে ব্যবহার করবে।’

দই ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এগুলো নিয়ে আমাদের চেষ্টা চলছে। আমাদের বিমানবন্দরের বিষয়ে বিভিন্ন কোরামে কথা তোলা হয়। এখন ৪ লেনের মহাসড়কের কাজ চলছে। এরপর রেলের কাজ হবে। একটা একটা করে হোক। এরপর যদি সকল সমীক্ষা শেষে ইতিবাচক থাকলে সরকার বিমানবন্দর দিতে পারে। আর ইপিজেড নিয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। সদরের সংসদ সদস্যও এটা নিয়ে চেষ্টা করছেন।’

ডিপিডিটি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিপিডিটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি।

কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের মাটি, পানি, আবহাওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাহলে সেটিকে সেই দেশের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সাধারণত প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও উৎপাদনভিত্তিক পন্যের জিআই স্বীকৃতি মেলে।

বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জিআই বা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হচ্ছে জামদানি। ২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর এটি সনদ পায়। এটির আবেদনকারী ও সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন।

এরপর একে একে স্বীকৃতি পায় ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। নতুন করে এ তালিকায় যুক্ত হলো বগুড়ার দইসহ চার পণ্য। এখন থেকে এসব পণ্য বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে।

ঢাকা বিজনেস/এমএ/



আরো পড়ুন