মনির মিয়া পেশায় দিনমজুর। যখন যে কাজ পান, তাই করেন। তার বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সুলেমানপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে মহালিয়া হাওরের তীরে। গেলো বছরের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত যখন পুরো সুনামগঞ্জ, তখন বন্যার পানিতে ঘর বাড়ি ভেসে যায় মনির মিয়ার। এবারও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অজানা ভয় কাজ করছে তার মনে। ঢাকা বিজনেসের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বরেন, ‘এইবার বন্যা হইলে নিঃস্ব হইয়া যামু।’
মনির মিয়া বলেন, ‘গত বছরের ভয়াবহ বন্যার কথা যতদিন বাঁচমু, মনে থাকবো। এখনো মনে হইলে বুক কাঁপে। সেদিন রাতে ঘরবাড়ি সব হারিয়েছি। হাওরের তীরে বাড়ি। বাড়ির চারপাশে পানি আর পানি। নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়ার সুযোগ ছিল না। কোনো রকম বাঁশের মধ্যে ছোট নৌকা বেঁধে নৌকায় রাত কাটাইছি। সকালে লোকজন এসে যদি উদ্ধার না করতো, তাহলে পানিতে ছেলে-মেয়ে লইয়া ভেসে যাইতাম।’
এই দিনমজুর আরও বলেন,‘বন্যার পর যদি মানুষে সাহায্য না করতো, তাহলে নতুন করে ঘর তৈরি করতে পারতাম না৷ ঢাকার এক আপায় একটা ঘর বানাইয়া দিছিল। ওই ঘরেই স্ত্রী, একছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে বাস করছি৷ এবারও যেভাবে পানি বাড়তেছে। না জানি কী হয়। গতবারের ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারতেছি না। এইবার ঘর বাড়ি ভেসে গেলে পথে বসতে হইবো।’
ভাটি তাহিরপুরের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামছিলো কয়েকদিন ধরে। ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ১৫ জুন দিবাগত রাতে। সন্ধ্যা নামার আগেই বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় পুরো জেলার৷ ইন্টারনেট সেবা ছিল বন্ধ। সারা দেশের সাথে একরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলো।’ তিনি বলেন, ‘ঝড়, বৃষ্টি ও বজ্রপাতের মধ্য দিয়েই হাজার হাজার মানুষ আশপাশের উঁচু ভবন, সরকারি-বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা আশ্রয় নেয়। ঐ দিনের কথা মনে পড়লে আজও বুক কাঁপে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন,‘ভারী ও অতি বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বন্যা হতেও পারে। তবে সেটা বড় নয়। ছোট ও স্বল্প মেয়াদি।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আছে। পানি বাড়ছে। তবে এখনো কোথাও বন্যার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।’তিনি আরও বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ জেলায় ২০২২ সালের বন্যায় সরকারি হিসাবে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি।
ঢাকা বিজনেস/এনই/