১৪ মার্চ ২০২৫, শুক্রবার



আজ ফরীদির জন্মদিন

বিনোদন ডেস্ক || ২৯ মে, ২০২৩, ১০:৩৫ এএম
আজ ফরীদির জন্মদিন


হুমায়ুন ফরীদি, বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র।  মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র, সবখানেই রাজত্ব করেছেন দুর্দান্ত প্রকোপে। 'ভাঙনের শব্দ শুনি'র সেরাজ তালুকদার, 'সংশপ্তক'র কানকাটা রমজান কিংবা 'শ্যামল ছায়া'র একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মানুষ মনে রাখবে আজীবন। একজন কিংবদন্তী তিনি। আজ সোমবার (২৯ মে) তার জন্মদিন। জাগতিক ভ্রমনে থাকলে আজ পা দিতেন ৭১ পেরিয়ে ৭২ বছরে। ১৯৫২ সালের আজকের এই দিনে গাজীপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।  

এই অভিনেতার জন্ম ঢাকায় হলেও বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরেছেন অনেক জেলায়। মাদারীপুর থেকে এসএসসি, চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র। দেশ স্বাধীন হলে শুরু করেন অভিনয়। প্রথম মঞ্চনাটক ১৯৬৪ সালে। এরপর ১৯৮০ সালে অভিষেক করেন নাটকে।  

‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চানমিয়ার নেগেটিভ পজিটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘ভবের হাট’ ও ‘শৃঙ্খল’। তার অন্য নাটকগুলোর মধ্যে আছে, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘একটি লাল শাড়ি’, ‘প্রিয়জন নিবাস’। সর্বশেষ তিনি ‘তখন হেমন্ত’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করেন এবং ‘পূর্ণ চাঁদের অপূর্ণতায়’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করেন।

নব্বইয়ের গোড়া থেকেই হুমায়ুন ফরীদির বড় পর্দার জীবন শুরু হয়। বাণিজ্যিক আর বিকল্প ধারা মিলিয়ে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে প্রথম ছবি তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। বাণিজ্যিক ছবির পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘সন্ত্রাস’, ‘দিনমজুর’, ‘বীরপুরুষ’ ও ‘লড়াকু’ ছবিতে খলচরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরই দেশীয় চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্র পায় এক অন্য মাত্রা। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছিল যে এক সময় মানুষ নায়কের পরিবর্তে তাকে দেখার জন্যই প্রেক্ষাগৃহে যেত। শহীদুল ইসলাম খোকন ‘বিশ্বপ্রেমিক’, ‘অপহরণ’, ‘দুঃসাহস’সহ ২৮টি ছবির মধ্যে ২৫টিতেই রাখেন ফরীদিকে।

নেগেটিভ, পজেটিভ অর্থাৎ নায়ক-খলনায়ক দু-চরিত্রেই তিনি ছিলেন সাবলীল, এক কথায় ভার্সেটাইল। তার জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল যে একসময় দর্শক তাকে দেখতেই হলে যেতেন। এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী খলনায়ক ছিলেন ফরীদি।

ফরীদি ছিলেন রোমান্টিক মানুষ। যৌবনের শুরুতে বেলি ফুলের মালা দিয়ে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেছিলেন। তখন এ বিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। এ সংসারে তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। পরে তিনি ঘর বাঁধেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। কিন্তু ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। শেষ জীবনটা তিনি অনেকটা নিঃসঙ্গতা নিয়েই কাটিয়েছেন। সেইসব দিনগুলোর অভিজ্ঞতা নিয়েই এক সাক্ষাৎকারে ফরীদি বলেছিলেন, ‘একা থাকা অনেক ভালো। কারণ একাকিত্ব কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না।’

২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ফাগুনের আগুনে বিষাদের কালো আভা ছড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন অভিনয়ের কিংবদন্তি পুরুষ হুমায়ুন ফরীদি। কাঁদিয়েছিলেন কোটি ভক্তকে। জীবন্ত ফরীদি তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতি নিজের হাতে না পেলেও, মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হুমায়ুন ফরীদির মেয়ের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের এই নক্ষত্রকে মানুষ চিরকাল মনে রাখবে। যুগ পেরিয়ে যাবে, কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্রে একজন হুমায়ুন ফরীদি আর জন্ম নেবেন না। 

ঢাকা বিজনেস/এন/ 



আরো পড়ুন