নরসিংদীতে জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। মার্কেটগুলোতে রয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়। করোনার প্রকোপ কাটিয়ে এ বছর ঈদের বাজার চাঙ্গা হয়েছে। মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে সকাল থেকে শুরু করে রাত পযর্ন্ত তীব্র গরম উপেক্ষা করে ভিড় করছেন ক্রেতারা। তবে, পণ্যসামগ্রীর দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নরসিংদীর ঈদবাজারে এবার দেশি কাপড়ের চাহিদা বেশি। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, খেটে খাওয়া মানুষ সাধ্যমতো ঈদের কেনাকাটা করছেন। বড় বড় দোকানের পাশাপাশি ফুটপাতেও কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। ফুটপাতে রিকশাচালক, দিনমজুরসহ সাধারণ মানুষের ভিড় বেশি।
অনেক ক্রেতার অভিযোগ, আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের প্রভাব কিছুটা এসব বাজারেও পড়েছে। তাই কাপড়েরর দাম কিছুটা বাড়তি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তবে দোকানিরা বলছেন, বঙ্গবাজারে প্রভাব কিছুটা পড়লেও তা কাটিয়ে ওঠার জন্য ঢাকার মিরপুর, কেরানিগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাপড় নিয়ে এসেছি আমরা।
বিক্রেতারা জানান, এ বছর বিদেশি পোশাকের চেয়ে দেশি পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি। তরুণীদের পছন্দের কিছু ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক বিক্রি হওয়ার বাইরে বিদেশি পোশাকের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ নেই ক্রেতাদের। এ বছর তরুণীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে অরগাঞ্জা ও আনারকলি নামে এই দুইটি পোশাক।
নয়নতারা প্লাজা ও কাজী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, একেকটি দোকান সাজাতে কোটি টাকার বেশি পোশাক দোকানে তুলতে হয়েছে। সিএ বি রোড, সদর রোড ও সুলতান উদ্দিন শপিং কমপ্লেক্সের বড় নামিদামি শো-রুমগুলোতে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে পোশাক তোলা হয়েছে ঈদকে কেন্দ্র করে। তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানের শুরুর দিকে মার্কেটে বেশি বিক্রি হয় শিশু ও নারীদের জামা-কাপড়। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, এসব পণ্যের বিক্রি ততই বাড়ছে।
নরসিংদী বাজারে কালীবাড়ী রোডের থ্রি-পিস ব্যবসায়ী আসলাম মিয়া বলেন, ‘সাধারণত শবে বরাতের পর থেকেই আমাদের ঈদের বিক্রি শুরু হয়। তবে এ বছর একটু দেরিতেই শুরু হয়েছে। প্রথম কয়েকদিন অনেক ক্রেতা শুধু জামাকাপড় দেখেন এবং দাম শোনেন। সাধারণ সময়ে আমার দোকানে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়। রোজার শুরু থেকে এখন প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে বিক্রির পরিমাণ তত বাড়ছে।’
সদর উপজেলার চিনিশপুর থেকে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে মার্কেটে এসেছেন লাবনী আক্তার। তিনি বলেন, ‘মার্কেটে অনেক ভিড়। সব জিনিসের দাম বেশি। এসেছি দুই ছেলে, মেয়ে, শ্বশুর, শাশুড়ি ও নিজের জন্য জামা-কাপড় কিনতে। সব পোশাকের দাম অনেক বেশি।’
ইন্ডেক্স প্লাজায় ঈদ কেনাকাটা আসা কোহিনুর বেগম নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘১০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছি শপিং করতে। দুই মেয়ের আর আমার জামা কেনাতেই সব টাকা শেষ। আজ জুতা কিনতে পারিনি। পরে আবার এসে জুতা কিনবো।’
শহরের বাজির মোড়ের সুলতান উদ্দিন শপিং কমপ্লেক্সের অভিজাত শাড়ির দোকান ‘আচল’র মালিক শরিফুল বলেন, ‘গত কয়েক বছর করোনার কারণে ঈদের সময় লকডাউন আর বিধিনিষেধে কেটেছে। এবার করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে। আশা করি, ভালো বেচাকেনা হবে। এ বছর ঈদে সিল্ক আর জামদানি শাড়ির চাহিদা বেশি। তাছাড়া সিল্ক, বেনারসি, কাঞ্জিবরণ, জামদানি, কারচুপি, কাতান, ঝুট জামদানি, মাচরাইচ ও কটনসহ নিভিন্ন ধরনের শাড়িও ভালো বিক্রি হচ্ছে।’
সিএন্ডবি রোডের দোকানি জজ মিয়া জানান, এই বছর বিভিন্ন ডিজাইনের পাঞ্জাবির মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান ব্রাশু, গুটি ও টিস্যু। তবে বেশি চলছে কাবলি। পাশাপাশি গেঞ্জি, শার্ট-প্যান্টও কিনছেন অনেকে।
এদিকে, ঈদকে সামনে রেখে ব্যাপক ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরীর দর্জিরা। সময়মতো পোশাক ডেলিভারি দেওয়ার চিন্তায় তারা দিন-রাত সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন। দর্জিরা জানান, ২০ রমজানের পর আর কোনো নতুন অর্ডার নেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে যে অর্ডার তারা নিয়েছেন, তা সময়মতো ডেলিভারি দিতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘ঈদকে ঘিরে শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতানগুলোতে আইনশৃঙ্খলার কোন অবনতি যেন না ঘটে, সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট, শপিং মলের সামনে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঢাকা বিজনেস/এইচ