১৫ মার্চ ২০২৫, শনিবার
দেশে বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি, বাজারজাতকরণ ও রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে ‘ভিসতা’ ব্র্যান্ড। ‘এক্সিলেন্স ইন টেকনোলজি’ স্লোগানে অ্যারিস্টক্রেট পণ্য দিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলোর একটি হওয়াই ভিসতার উদ্দেশ্য।
‘ভিসতা’ ইতালিয়ান শব্দ। এর অর্থ দেখা, সুখদর্শন, দূরদর্শী। আর ভাবার্থ হলো সাফল্যের সিঁড়ি। আর এই সাফল্যের সিঁড়ি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ৫ স্বপ্নবান, পাঁচ স্বপ্নবান, অভিজ্ঞ ও মেধাবী উদ্যোক্তা। এই পাঁচ ব্যক্তিত্ব ইতোপূর্বে দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পেছনের কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন। এবার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। উদ্যোক্তারা হলেন ভিসতা চেয়ারম্যান শামসুল আলম, ব্যবস্থা পরিচালক লোকমান হোসেন আকাশ, পরিচালক উদয় হাকিম, ইলিয়াস কাঞ্চন ও প্রকৌশলী মইনুল হক।
শামসুল আলম। ভিসতার চেয়ারম্যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতে। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মেশিনারিজ ও কাঁচামাল বিষয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রেফ্রিজারেটর কারখানা প্রতিষ্ঠার পেছনে সরাসরি কাজ করেছেন এই মেধাবী উদ্যোক্তা।
লোকমান হোসেন আকাশ। ভিসতার ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যার হাত দিয়েই প্রথম বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স পণ্য রপ্তানি শুরু হয়। ইলেকট্রনিক্স পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার বিষয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ।
উদয় হাকিম। ভিসতার পরিচালক। তিনি ব্র্যান্ডিং, করপোরেট কমিউনিকেশন, পাবলিক রিলেশন, মিডিয়া ও মার্কেটিং বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। নতুন বা ছোট একটি ব্র্যান্ডকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি এর আগে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। দীর্ঘ ১২ বছর সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন উদয় হাকিম ভিসতার অর্থায়নে পরিচালিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা বিজনেসের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রকৌশলী মইনুল হক। ভিসতার পরিচালক। তার হাত ধরেই দেশে প্রথম ইলেকট্রনিক্স কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য প্রথম উৎপাদনে যায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা প্রকৌশলী হিসেবে তিনি পরিচিত।
ইলিয়াস কাঞ্চন। ভিসতা পরিচালক। সিনেমার পর্দার পাশাপাশি বাস্তবেও তিনি সফল একজন করপোরেট ব্যক্তিত্ব। চিত্রনায়ক ও উদ্যোক্তা ইলিয়াস কাঞ্চনের পাশাপাশি তিনি বিশ্ববাসীর কাছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন’-এর চেয়ারম্যান হিসেবেও পরিচিত।
দেশের বাজারে প্রথম ‘জেনুইন অ্যান্ড্রয়েড-৯’ টিভি নিয়ে আসে ভিসতা। বেসিক এলইডি ও স্মার্ট টিভির চেয়ে অনেক বেশি আপগ্রেডেট এই অ্যান্ড্রয়েড টিভি। এটি আগামী প্রজন্মের পণ্য। ভিসতা টিভি গুগল সার্টিফায়েড। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপগ্রেড হবে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলফোন সেটের মতো।
ভিসতার এসব অ্যান্ড্রয়েড টিভির হার্ডওয়্যার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের। সফটওয়্যার যুক্তরাষ্ট্রের। ভিসতা টিভির প্যানেল তৈরি হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড়-শীর্ষ কারখানা থেকে। ভিসতার নিজস্ব কারখানা গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাই–টেক সিটিতে।
বর্তমানে উচ্চ মানের অ্যান্ড্রয়েড ও বিভিন্ন ধরনের টিভি উৎপাদন করছে ভিসতা। এ ছাড়া অ্যান্ড্রয়েড প্রজেক্টর, বিভিন্ন ধরনের মনিটর, ভিডিও ওয়াল, ডিজিটাল সাইনেজ, ডিজিটাল হোয়াইট বোর্ড, রাউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট মিরর, মেডিকেল ডিসপ্লে, ভিআরএফ এসি, অ্যাকসেসরিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য বাজারজাত করছে ভিসতা। পরিকল্পনা চলছে ভিসতার হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও এসি উৎপাদন কারখানা তৈরিরও। এরপর স্মার্ট রেফ্রিজারেটর উৎপাদনে যাবে কোম্পানিটি।
ভিসতা ইলেকট্রনিকসের প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে নিজস্ব কারখানায় উচ্চ মান বজায় রেখে তৈরি হচ্ছে ভিসতা টিভি। প্যানেল, মাদারবোর্ড, প্রসেসর—এসব ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ ব্র্যান্ডের।
ভিসতার বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের প্রধান তানভীর জিহাদ জানান, ভিসতা যে মানের টিভি তৈরি করছে, তা বাংলাদেশের বাজারে আর নেই বললেই চলে।
ভিসতার প্রকৌশলীরা জানান, তাদের রয়েছে ৩২, ৪৩, ৫৫, ৬৫, ৭৫ ও ৮৬ ইঞ্চির বিভিন্ন ধরনের টিভি। টিভি কেনার সময় দুটো জিনিস মাথায় রাখতে হয়—প্যানেল ও সাউন্ড কোয়ালিটি। ভিসতা টিভিতে ব্যবহার করা হয়েছে ন্যানোসেল টেকনোলজির ব্ল্যাক প্যানেল। ফলে কালার পারফেকশন থাকে শতভাগ। ব্ল্যাক প্যানেল অনাবশ্যক আলোক শোষণ করে। দরকারি আলোর সন্নিবেশ ঘটিয়ে স্ক্রিনে ঝকঝকে রঙিন ছবি প্রদর্শন করে। ভিসতা টিভির অ্যাসপেক্ট রেশিও ১৬:৯। ভিউইং অ্যাঙ্গেল ১৭৮ ডিগ্রি। ফলে যেকোনো পাশে বসেই ক্লিয়ার ভিউ পাওয়া যায়। কালার শিফটিং হয় না। কারণ, এর ডিসপ্লেতে কালার আছে ১.০৭ বিলিয়ন।
ভিসতা ৪৩ ইঞ্চি টিভি অরিজিনাল ফোরকে; এর রেজুলেশন ৩৮৪০×২১৬০। ফলে এর ডিসপ্লে ব্রাইটনেস থাকে সঠিক। রিয়েল ফোরকে হওয়ায় নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমের মতো চ্যানেল বা প্ল্যাটফর্মে ফোরকে স্ট্রিমিং করা যায়।
ভিসতার এই ফোরকে আলট্রা এইচডি টিভিতে ব্যবহৃত হয়েছে ব্রিটিশ টেকনোলজির করটেক্স এ৫৩ কোয়াডকোর প্রসেসর। যার সর্বোচ্চ ক্লক স্পিড ১.৫ গিগাহার্টজ। রয়েছে মডেলভেদে ১ থেকে ২ জিবি র্যাম এবং ৮ থেকে ১৬ জিবি রম। অপারেটিং সিস্টেম লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড-১১।
ভিসতায় ব্যবহার করা হয়েছে মার্কিন ডলবি ডিজিটাল আটমোস সারাউন্ডিং সাউন্ড সিস্টেম। যুক্ত হয়েছে ৮ ওয়াটের দুটি সাউন্ড স্পিকার। ফলে স্পষ্ট শব্দে মনমতো উপভোগ করা যায় যেকোনো অডিও-ভিডিও কনটেন্ট।
ভিসতা অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে মডেলভেদে ছয় শতাধিক অ্যাপ রয়েছে হোমস্ক্রিনেই। নেট কানেকশন থাকলে ডিশ লাইন ছাড়াই উপভোগ করা যাবে অসংখ্য টিভি চ্যানেল। বিল্টইন ক্রম কাস্ট এবং ই-শেয়ারের মাধ্যমে টিভির সঙ্গে যুক্ত করা যাবে মুঠোফোন। এ ছাড়া ৭ হাজারের বেশি অ্যাপের মাধ্যমে মুভি, খেলা, জনপ্রিয় সিরিজ, মিউজিক উপভোগ করা যাবে। বিস্তারিত জানা যাবে vistabangladesh.com ওয়েবসাইেট।
দেশ-বিদেশের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে আরও বড় পরিসরে কারখানা স্থাপনের কাজ চলমান। ৩ বছরের মধ্যে প্রকৌশল খাতের একটি অভিজাত ব্র্যান্ড ও শক্তিশালী মুনাফামুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় ভিসতা। এই সময়ের মধ্যে ব্যাপক হারে রপ্তানির পর বিশ্বের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্টক মার্কেটে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই অ্যারিস্টক্রেট ব্র্যান্ডটি।
