গাইবান্ধাসহ উত্তরের জেলা রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ধীরে ধীরে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। নদীভাঙন, ইটভাটা ও বসতবাড়ি গড়ে ওঠায় আবাদি জমি হ্রাস পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যঘাটতি যাতে না হয়, সেজন্য বালুচর বা পতিত জমিতে বিকল্প পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাড়াতে কাজ করতে হবে।
ওইসব জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় মোট জমির পরিমাণ ৮ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৬ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর। আবাদযোগ্য জমিতে চাষিরা নানা ধরনের ফসল উৎপান করে থাকেন। কিন্তু, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, করতোয়া ও তিস্তা নদীর ভাঙন এবং বন্যায় আবাদি জমিতে বালু পড়ায় কোনো ধরনের শস্য ফলন হয় না এমন জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৮ হাজার ৫০০ হেক্টর। আবার প্রতিবছর নতুন নতুন বসতবাড়ি-অবকাঠামো গড়ে ওঠায় আবাদি জমি কমছে। আবার ইটভাটায় মাটির জন্য আবাদি জমিও কমছে বলে জানা গেছে।
সাঘাটা উপজেলার কৃষক বাচ্চু প্রামানিক জানান, তার ৪০ বিঘা জমি ছিল। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগেই ব্রহ্মপুত্রের নদে প্রায় ১৫ বিঘা জমি বিলীন হয়ে বালুচর হয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
স্থানীয় সংবাদকর্মী আবু তাহের বলেন, ‘আবাদি জমিতে হাট-বাজার, বসতবাড়ি-অবকাঠামো নির্মাণ হওয়ায় ক্রমে কমে যাচ্ছে আবাদি জমি। আবার যত্রতত্র ইটভাটা গড়ে উঠায় আবাদি জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে।’
গাইবান্ধার ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু হানিফ জানান, এই ইউনিয়নের ৮০ ভাগ আবাদি জমি গত ১০ বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যা এখন বালি পড়ে অনাবাদি হিসেবে পড়ে আছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের (জিইউকে) নির্বাহী এবং নদী ও চর গবেষক এম. আবদুস সালাম বলেন, ‘নদীভাঙন, বন্যা, খরা ও অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি গড়ে তোলায় কৃষিনির্ভর এই দেশের আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে উত্তরাঞ্চলে ফের খাদ্যসংকট বা মঙ্গার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।’ এজন্য বালুচর বা পতিত জমিতে বিকল্প পদ্ধতিতে চাষাবাদ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বেলাল উদ্দীন বলেন, ‘নদীভাঙন, বন্যা ও বসতবাড়ি স্থাপন হওয়ায় আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। কৃষকরা বালুচর ও পতিত জমিতে চাষাবাদ করছে এবং এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।’
ঢাকা বিজনেস/এম