৩১ মার্চ ২০২৫, সোমবার



খেললো হামজা, দেখলো অন্যরা, জিতলো সিন্ডিকেট!

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ২৫ মার্চ, ২০২৫, ১১:০৩ পিএম
খেললো হামজা, দেখলো অন্যরা, জিতলো সিন্ডিকেট!


ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে যেন একাই খেললেন হামজা চৌধুরী। বাকিরা শুধু দৌড়ঝাঁপে সময় পার করেছেন। গোলশূণ্য ড্র করে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে সফরকারী বাংলাদেশ। কারণ ড্র করে তারা এক পয়েন্ট পেয়েছে। তবে কথিত সিন্ডিকেটের প্রভাবেই কি না- ছন্নছাড়া বাংলাদেশ। দলে ছিলো না কোনো বোঝাপড়া, ছিলো না কোনো গোছালো আক্রমণ। ভুল পাস আর বল ঠেকাতেই সময় গেছে বাংলাদেশের। 

শিলংয়ের জহর লাল নেহেরু স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ম্যাচ শুরু হয়। অধিনায়ক জামাল ভূইয়া একাদশে ছিলেন না। কেন নেই কারণ জানা যায় নি। তার জায়গায় তপু বর্মণ অধিনায়কত্ব করলেও ইনজুরি নিয়ে তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। তার জায়গায় আসেন রহমত। জোরো বল থ্রু ছাড়া আর কোথাও সফল হতে দেখা যায়নি তাকে।  

প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি কোনো দলই। দুটি সহজ সুযোগ পেয়েও নষ্ট করেছে বাংলাদেশ। ভারতও সমান সংখ্যাক সুযোগ নষ্ট করেছে। পালটাপাল্টি আক্রমণে প্রথম ৪৫ মিনিট শেষ হলেও বাংলাদেশ দলে ছিল বোঝাপড়ার অভাব। কোনো পরিকল্পিত আক্রমণে যেতে পারেনি তারা। 

ম্যাচের প্রথম মিনিটেই রাইট আউট দিয়ে বক্সে ঢুকে যান মজিবর রহমান জনি। কিন্তু ফাকা জালেও বল জড়াতে ব্যর্থ হন। গোলমুখ ফাঁকা দিখে তিনি যেন কি করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ন্যাশনাল লেভেলে এরকম প্লেয়ার কীভাবে খেলে দর্শক হিসেবে সে প্রশ্নই মাথায় আসে এই প্রতিবেদকের। ২০ নাম্বার জার্সিধারি জনি প্রথম মিনিটে যে সুযোগ নষ্ট করলেন তা ক্ষমার অযোগ্য।  

১২ মিনিটে আরেক ভুল করে বসে বাংলাদেশ। গোলকিপরাকে একা পেয়েও তার হাতে তুলে দেয়া হয় বল। ১৭ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে পাওয়া ভলি মাথা লাগাতে পারলেন না দুই বাংলাদেশী। হৃদয়কে মনে হয়েছে একেবারেই নিস্প্রভ। 

অন্যদিকে ২৭ মিনিটে বাংলাদেশের কিপার মিতুলকে একা পেয়েও বল জালে নিতে পারলেন না ভারতের লস্টন কোলাচো। ৩০ মিনিটে দারুন এক সংঘবদ্ধ আক্রমন করে ভারত। কিন্তু বল জাল খুঁজে পায়নি। 

৪০ মিনিটে আবার সেই জনি। ভারতের কিপারকে একা পেয়েও কাজের কাজ করতে পারলেন না। অন্যদিকে ভারতের লেফট আউট ফারুখ বার বার ফাঁক গলে বেরিয়ে বিপদজনক হয়ে ওঠেন। সেখানে বাংলাদেশের রাইট ব্যাক ছিলো খুব নড়বড়ে। 

ভুল পাস, ভুল থ্রু। কোনো পরিকল্পিত আক্রমন নেই। বোঝাপড়া নেই। এভাবেই শেষ হয় ৪৫ মিনিট। 

দ্বিতিয়ার্ধে আক্রমনাত্বক হয়ে ওঠে ভারত। দুই উইং দিয়ে তারা একের পর এক আক্রমণ শানায়। ৫৭ মিনিটে পর পর দুটি কর্নার আদায় করে নেয় ভারত। যদিও গোল পায়নি তারা। প্রথমবার সুনীল ছেত্রীর হেড ফিরিয়ে দেন হামজা। পরের মিনিটে আবারো কর্নার ভারতের। 

৬০ মিনিটে সুযোগ নষ্ট করলো সেই জনি। এরপরই তাকে পাঠানো হয় বাইরে। নিষ্প্রভ সাদও উঠে যায়। 

৬২ মিনিটে আবারো কর্নার পায় ভারত। সুনীল শট নিলেও অনেক উপর দিয়ে চলে যায় বল। 

দ্বিতীয় হাফে বলা চলে পুরোটা সময়ই খেলা হয় বাংলাদেশের অর্ধে। ভারতের দিকে বাংলাদেশ বল নিতেই পারছিল না। এলোমেলো আর ভুল পাসে খেলা কখনোই গুছিয়ে ওঠতে পারেনি বাংলাদেশ। 

৬৭ মিনিটে দারুণ এক শট নেন সুভাশীষ বোস। বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল নিজের গ্রিফে নিয়ে নেন বল। ৭৮ মিনিটে কর্নারের বিনিময়ে দারুণ শট সেফ করে মিতুল। সুভাশীষের হেড একটুর জন্য বারের ভেতরে ঢুকলো না। ৭৪ মিনিটে রাকিবের দারুণ এক ক্রস মিস করেন ফাহিম। অভিযোগ রয়েছে ফুটবলের কথিত সিন্ডিকেট এই ফাহিমকে জায়গা দিতেই ইতালীর ফাহমিদুলকে দলের বাইরে রাখে। দর্শকদের অভিযোগের তীর যে খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে ছিলো আশ্চর্যজনকভাবে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ করতেই কি না- তারাও ব্যর্থ!   

এরপর ভারতের একের পর এক আক্রমণ রুখতে হিমসিম খায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৯৪ মিনিটে দারুন সুযোগ নষ্ট করে রাকিব। যদিও তার শট অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। 

যাহোক এই ম্যাচ দেখে মনে হলো- টিপিক্যাল সাউথ এশিয়ান ম্যাচের মতোই। তবে বাংলাদেশের তুলনায় ভারত কিছূটা গোছানো ছিল। বাংলাদেশ দলে বোঝাপড়ার অভাবটাই প্রকট হয়েছে। ছিলো না ভালো কোনো স্কোরার। এক হামজা ভালো খেললেও বাকিরা তাকে খুব একটা সাপোর্ট দিতে পারেন নি। দ্বিতীয়ার্ধে তাই হামজাকে শুলু হামলা ঠেকোতেই দেখা গেলো। তবে আরো তিন/চারজন বিদেশী অন্তর্ভূক্ত হলে এবং একসাথে প্র্যাকটিস করে বোঝাপড়ার হিসেব মিলিয়ে নিলে ভালো ফল আসতে পারে। 

তবে দ্বিতীয়ার্ধে ভারত যেভাবে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশকে- তাতে ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারা সফরকারীদের জন্য ভালো ফলই বৈ কি। 



আরো পড়ুন