বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন শীর্ষস্থানীয় মার্কিন ব্যবসায়ী ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারিবারিক ব্যবসায়ের অংশীদার জেন্ট্রি বিচ। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এই আগ্রহের কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বিচকে বাংলাদেশের ‘গুরুত্বপূর্ণ সময়ে’ বিনিয়োগ করার জন্য স্বাগত জানান। এ সময় জেন্ট্রি বিচ বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন। হাইগ্রাউন্ড হোল্ডিংসের সিইও ও প্রতিষ্ঠাতা জেন্ট্রি বিচের কোম্পানি বাংলাদেশে একাধিক সম্পদ অধিগ্রহণ করেছে। দেশের জ্বালানি, অর্থনীতি এবং অন্যান্য বিভিন্ন খাতে আরো বিনিয়োগ করতে চায়।
প্রতিনিধি দলটি উন্নয়ন-জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয় মার্কিন ব্যবসায়ীদের এ দল। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক নেতারাও এতে অংশ নেন। এ সময় জেন্ট্রি বিচ বলেন, ‘বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে কিছু প্রস্তাব দিতে আমি বাংলাদেশে এসেছি। আমরা উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ করতে চাই। পাশাপাশি শান্তি ও সমৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা করা হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার নেতৃত্বে আসায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা কাজে লাগাতে চাই।’
প্রেস উইং জানায় জেন্ট্রি বিচ প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আপনি দারুণ কাজ করছেন। এখন এ দেশে আরো বিনিয়োগ আসার সময়। আমরা এখানে আসতে পেরে উচ্ছ্বসিত।’ বিনিয়োগ কোম্পানি প্যারামাউন্ট ইউএসএর এ চেয়ারম্যান আরো জানান, তার কোম্পানি রিয়েল এস্টেট, বিশেষ করে স্বল্পমূল্যের সামাজিক আবাসন, মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা খাতেও বিনিয়োগে আগ্রহী।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশ এখন ব্যবসার জন্য প্রস্তুত। ব্যবসায়িক পরিবেশ এখন উপযুক্ত। আমরা আমাদের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের শুরু করছি। বাংলাদেশের গ্যাস অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন খাতে আরো মার্কিন বিনিয়োগ প্রয়োজন।’ আফ্রিকায় বিনিয়োগ করা এবং পাকিস্তানে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা বিচ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আরো বিনিয়োগ মানে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি।’
সফরকারী দলে আরো ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি আলি আবদুলকাদির মোহাম্মদ দেমিরহান, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি আইভর ইচিকোভিটজ, নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি ভ্যান ডেন হিউভেল বেনসন জোয়াকিম, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ইওআনু নিকোলাস, যুক্তরাজ্যের আইনি সহায়তা প্রতিনিধি ব্যারিস্টার আবদুস সালাম, যুক্তরাজ্যের আইনি সহায়তা প্রতিনিধি ব্যারিস্টার আবু সায়েম, নেদারল্যান্ডসের প্রতিনিধি গ্যাব্রিয়েল জোসেফ অ্যান্থনি পিনেডো। প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাড়াও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে রাতেই জেন্ট্রি বিচ বাংলাদেশ সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে গেছেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জেন্ট্রি বিচের নেতৃত্বে আমেরিকার একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল প্রাইভেট ফ্লাইটযোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি, মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) গাজী একেএম ফজলুল হক, উপপরিচালক মো. ফাইজুর রাঝি, সহকারী পরিচালক সিকদার দিদারুল, মাঠ কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান ।
উল্লেখ্য, জেন্ট্রি বিচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। বিচ ট্রাম্পের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগে জড়িত এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে সমর্থনও করেছেন। ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব ছাড়াও বিচ ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ট্রাম্প সম্পর্কিত কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেছেন এবং ট্রাম্পের সহযোগী মহলের অংশ। বিচ ২০১৬ সালে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহে সহায়তা করেছেন। তিনি ট্রাম্পের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেন।