শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজ জিতলেই ওয়ান-ডে সিরিজ হয়ে যেতো বাংলাদেশের। কিন্তু হলো না, ম্যাচটা জিতে ১-১-এ সমতায় ফিরলো শ্রীলঙ্কা। এখন ১৮ মার্চ তৃতীয় ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সিরিজটা এখন হতে পারে যে-কারও। দ্বিতীয় ওয়ান-ডেতে শ্রীলঙ্কার কাছে ৩ উইকেটে হারলো বাংলাদেশ। ২৮৭ রানের রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১৭ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।
চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ওয়ান-ডেতে টস হেরে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ, সংগ্রহ করে ৭ উইকেটে ২৮৬ রান। লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় সফরকারী লঙ্কানরা। ১ রানেই হারায় ওপেনার আভিস্কা ফারনান্দোকে। শরিফুলের বলে উইকেটের পেছনে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি। ক্যাচটি নিতে ভুল করেননি সৌম্য সরকার।
দলীয় ৪২ রানে অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে হারায় শ্রীলঙ্কা। ৬ষ্ঠ ওভারের প্রথম বলেই উইকেটে পেছনে কিপার মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ঠিক এক রান পড়ে ৭ম ওভারের প্রথম বলে আবারো আঘাত হানেন শরিফুল। তুলে নেন নিজের দ্বিতীয় উইকেট। লঙ্কানরা ৪৩ রানে হারান তৃতীয় উইকেট। প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। এরপর নিশাঙ্কা ও আশালঙ্কা আশা দেখান শ্রীলঙ্কাকে। দুজনেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। মাঝের ওভারগুলোতে বোলাররা কিছুই করতে পারেননি। আর লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা ছিলেন বাঁধনহারা।
৩০ ভার শেষে যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১৬০/৪, সেখানে শ্রীলঙ্কা তুলে নেয় ১৮২/৩। ঠিক ১০০ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন উদ্বোধনী ব্যাটার পাথুম নিশাঙ্কা। অন্য ব্যাটার আশালঙ্কা তখন ৬৮ রানে অপরাজিত। জুটি ভাঙে ২২৮ রানে। ১১৩ বলে ১১৪ রান করে ফেরেন নিশাঙ্কা। জুটি ছিল ১৮৫ রানের। তার আগেই সর্বনাশ না যা হওয়ার হয়ে গেছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে নেয় লঙ্কান ব্যাটাররা। ৯৩ বলে ৯১ করে ফেরেন আশালঙ্কা। ওই উইকেট নিয়ে ওয়ান-ডেতে ১০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন তাসকিন। যদিও ততক্ষণে বাংলাদেশের আশা ছিনতাই হয়ে গেছে। তারপরও ২৩৫ রানে ৫ম উইকেটের পতন হলে কিছুটা যেন প্রাণ ফিরে পান টাইগার ভক্তরা। শেষ পর্যন্ত ৪৭.১ ওভারে ২৮৭ রান তুলে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচ জেতে ৩ উইকেটে।
বাংলাদেশের পক্ষে শরিফুল ও তানকিন ২ উইকেট করে নেন। একটি করে উইকেট পান তানজিম, মিরাজ ও তাইজুল। তবে মিরাজ এবং তাইজুলের বোলিং ছিল একেবারেই সাদামাটা। বলা চলে স্পিনাররা প্রতিপক্ষের রান আটকাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। আগামি ম্যাচে তাই রিশাদকে নামালেই হয়তো স্পিনে শক্তি বাড়বে।
এর আগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৬। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন টাইগার ব্যাটার তওহিদ হৃদয়। শুক্রবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টসে হেরে ব্যাটিং পায় বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ান-ডের মতো শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় বলে কোনো রান না করেই ফিরে যান ওপেনার লিটন দাস। প্রথম ওয়ানডেতে ইনিংসের প্রথম বলে বোল্ড হয়েছিলেন লিটন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইনিংসের তৃতীয় বলে মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ দেন ওয়ালালাগার হাতে। দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে আউট হয়ে আবারও শূন্য হাতে ফেরেন লিটন দাস, দলও শূন্য রানে।
শান্ত-সৌম্য ভালোই এগোচ্ছিলেন। ৫ ওভারে চলে আসে ২৯ রান। ১০ ওভারে আসে ৬৪/১। ১২.২ ওভারে দল যখন ৭৫ রানে, তখন আউট হয়ে যান শান্ত। কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪০ রান করে (৩৯ বলে)। আগে একবার জীবন পেলেও বোলার দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে তাকে ফিরতে হয়।
এদিকে তাওহিদ হৃদয় ৬ রানে জীবন পান। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেও রাখতে পারেননি উইকেট কিপার কুশল মেন্ডস। এরপর হৃদয় খেলতে থাকেন খুব সাবধানে। এদিকে, সৌম্য তখন উড়ছিলেন। অনেক দিন পর তার ব্যাট হাসছিল। ৫২ বলে তিনি করে ফেলেন হাফ সেঞ্চুরি। মনে হচ্ছিল বড় কোনো সংগ্রহের দিকেই যাচ্ছেন তিনি।
কিন্তু বাংলাদেশের বড় সর্বনাশ হয়ে যায় হাসারাঙ্গার করা ২২তম ওভারে। ওভারের দ্বিতীয় বলে সেট ব্যাটসম্যান সৌম্য আউট হয়ে যান নিজের দোষেই। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেই কমন প্রবলেম, অযথা রিভার্স সুইপ খেলতে যান সৌম্য। ডিপ থার্ডম্যান অঞ্চলে দেন সহজ ক্যাচ। ৬৬ বলে ৬৮ রান করে বিদায় নেন সৌম্য সরকার। দলীয় রান তখন ১৩০। নতুন ব্যাটসম্যান আসেন রিয়াদ। প্রথম বল ডট করলেও পরের বলে রিয়াদ স্ট্যাম্পড। একজন ব্যাটসম্যান কখনোই ক্রিজে গিয়ে শুরুর দিকে এভাবে ডাউন দি উইকেটে যান না। রিয়াদ আনাড়ির মতো সেটাই করে বসলেন। ওই ওভারে কোনো রান না দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন হাসারাঙ্গা। বাংলাদেশ ১৩০ রানে হারায় ৪ উইকেট।
হৃদয় আর মুশফিকের ব্যাটিংয়ে সাবধানে এগোতো থাকে বাংলাদেশ। তবে রানের গতি কমে যায়। আগে সব সময়ই ৬ এর উপরে ছিল রান রেট। সেটা নেমে যায় ৫.৩ এর ঘরে। ২৮ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫০। ৩০ ওভার শেষে ১৬০।
৩১তম ওভারে ১৩ রান পেলেও ৩২তম ওভারে টাইগার শিবিরে আবারো লঙ্কান হানা। এলবিডব্লিউ এর আবেদন অন ফিল্ড আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল নাকচ করে দিলে রিভিউ নেয় শ্রীলঙ্কা। শেষে এলবিডবির ফাঁদ থেকে আর ফিরতে পারেন নি। মুফফিক আউট হন ২৫ রান করে। আবারো উইকেট নেন সেই হাসারাঙ্গা। ১৭৩ রানের মাথায় পড়ে পঞ্চম উউকেট। আগের ম্যাচে ৪ উইকেট দিয়েই ম্যাচ শেষ করেছিল বাংলাদেশ। আর তাই ওডিআই সিরিজে প্রথমবারের মতো ব্যাট করতে নামতে হলে মিরাজকে।
যেখানে ইনিংস বিল্ড আপ করার কথা, সেখানে দলীয় ১৮৯ রানে আউট হয়ে যান মিরাজ। সেই হাসারাঙ্গার বলে রিয়াদের মতো আনাড়িভাবে ডাউন দি উইকেটে এসে বলটাই আটকাতে ব্যর্থ হন তিনি। ১৮ বলে মিরাজের সংগ্রহ ১২। উইকেটে আসেন তানজিম সাকিব। ৬ষ্ঠ উইকেট হারিয়ে অনেকটা বিপদেই পড়ে যায় টাইগাররা। পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারবে কি না জাগে সেই শঙ্কা।
দলীয় সংগ্রহ ২০০ হয় ৩৮.৫ ওভারে, ৬ উইকেটে। ৪০ ওভার শেষে ২০৬। ৪০.৩ ওভারে হৃদয় পান হাফ সেঞ্চুরি। কতটা সাবধানী ইনিংস খেলেছেন যে ৭৪ বলে ৫০ করেন তিনি।
তৃতীয় পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। ৫ ওভারে রান আসে মাত্র ২৬। পরের ওভারগুলোতে রান বাড়ানোর তাড়া থাকলেও পারেননি ব্যাটাররা। ৪৭তম ওভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে আউট হন তানজিম। ৩৩ বলে ধীর গতিতে তিনি করেন ১৮ রান। ২৩৬ রানে পড়ে ৭ম উইকেট।
আড়াইশ’ পার হয় ৪৭.৩ ওভারে। হৃদয়ের ২ ছক্কায়। কিন্তু ওভারের পরের ৩ বলে কোনো রান নিতে পারেন নি হৃদয়। অপেক্ষা করতে সহয় শেষ ২ ওভারের জন্য। অবশ্য শেষের দিকে চালিয়ে খেলেন তাসকিন এবং হৃদয়। ৪৯তম ওভারে আসে ১৭ রান। শেষ ওভারে ১৫। ৫০ ওভার শেষে টাইগারদের সংগ্রহ ৭ উইকেটে ২৮৬। হৃদয়ের সংগ্রহ ১০২ বলে ৯৬, অপরাজিত থেকেও মাত্র ৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তিনি। শেষ দিকে তাসকিন করেন ১০ বলে ১৮ রান।
ঢাকা বিজনেস/ই/এনই/