ছোট ছোট শিশুরা কারণে-অকারণে অনেক সময় কান্না করে থাকে। কখনো কখনো তারা অতিরিক্ত কান্না করে থাকেন। যা মা-বাবার জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। শিশু কেন কান্না করে, তা জানা জরুরি। সমস্যাগুলো যদি শনাক্ত বা বুঝতে পারা যায়, তাহলে কান্না অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়।
শিশু কেন অতিরিক্ত কান্না করে এবং এর সমাধান সম্পর্কে সম্প্রতি দেশের একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সানজিদা আহমেদ। এবার তাহলে এই চিকিৎসকের ভাষ্যমতে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
অতিরিক্ত কান্নার কারণ: ছোট শিশুদের ভাষাই হচ্ছে কান্না। তারা কথা বলতে পারে না। এ জন্য তারা কেন কান্না করছে, সেটি বোঝার চেষ্টা করতে হবে মা-বাবার। শিশু ফাংশনাল ও অর্গানিক কারণে অতিরিক্ত কান্না করতে পারে।
ফাংশনাল কারণ: অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুর অতিরিক্ত কান্নার পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায় না। এ কারণে এটাকে ফাংশনাল কারণ বলা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশই ফাংশনাল কারণে হয়ে থাকে। যেমন―ক্ষুধার্ত থেকে অতিরিক্ত কান্না করে থাকে। ক্ষুধা বেশি লাগলেও কান্না করে। তাদের অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানোর জন্য বা বেশি খাবার খাওয়ার পর পেট ফুলে অস্বস্তিবোধ থেকেও কান্না করে শিশুরা।
ঘুম পেলেও কান্না করে শিশুরা। ক্লান্তিবোধ থেকে এবং শিশুর ঘুমানোর বা খেলাধুলার জায়গা যদি কোনো কারণে ভেজা (হতে পারে প্রস্রাব বা পায়খানা থেকে) থাকে তাহলে কান্না করে। অতিরিক্ত শীত বা গরম থেকে অস্বস্তিবোধ করলেও কান্না করে। কোনো কারণে পেট ব্যথা হলে এবং তাকে যদি গুরুত্ব দেয়া না হয়, তখন মনোযোগ আকর্ষণের জন্যও কান্না করে। আবার অনেক সময় কোলে উঠার জন্য যেমন, ঘুম থেকে উঠার পর শুয়ে থাকতে ভালো লাগে না। কখনো আবার রেগে গেলে ও মন খারাপ থাকলেও কান্না করে। শারীরিক কোনো অসুস্থতা ছাড়াই এসব ফাংশনাল কারণে কান্না করে থাকে শিশুরা।
ইনফ্যান্টাইল কোলিক কী: শিশুর অতিরিক্ত কান্নার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ইনফ্যান্টাইল কোলিক। মাত্র ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ বয়স থেকেই লক্ষ্য করা যায়, শিশু বিকেল হলে কান্না করতে থাকে। তাকে আর থামানো যায় না। শিশু কান্না করলে যদি ৩ ঘণ্টার বেশি কান্না করে, সপ্তাহে ৩ দিন বা এর বেশি এভাবে কাঁদে, টানা তিন সপ্তাহ এমন চলে, প্রতিদিন বিকেল বা রাতে কান্না করে, একটানা কান্না করতে থাকে এবং তাকে থামানো না গেলে তখন এটাকে ইনফ্যান্টাইল কোলিক বলা হয়।
ইনফ্যান্টাইল কোলিকগত কারণে শিশুরা ৩ মাস বয়স পর্যন্ত অতিরিক্ত কান্না করে। কখনো কখনো কোনো শিশু ৬ মাস পর্যন্তও কান্না করে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর অতিরিক্ত কান্না ৩ মাস বয়সেই কমে গিয়ে ঠিক হয়ে যায়।
ইনফ্যান্টাইল কোলিক হওয়ার কারণ: শিশুর খাদ্যনালী যদি ইম্যাচির থাকে তখন খাবার হজম হতে সমস্যা হলে পেট ফুলে যায়। দুধে, মিল্ক প্রোটিনে অ্যালার্জি থাকলে, মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার সময় মা যদি গরু বা অন্য কোনো খাবার না খায় তা থেকে অ্যালার্জিও হতে পারে শিশুর। আবার শিশুকে যে ফর্মুলা খাওয়ানো হচ্ছে, তাতে মিল্ক প্রোটিনে অ্যালার্জি থাকতে পারে। যা থেকে ইনফ্যান্টাইল কোলিক হতে পারে শিশুর।
অর্গানিক কারণ: শারীরিক সমস্যার কারণে অতিরিক্ত কান্না করলে তখন তাকে বলা হয় অর্গানিক কারণ। এ ক্ষেত্রে শিশুরা ৫ শতাংশ কান্না করে থাকে। সাধারণত জ্বর থাকলে, নাক বন্ধ বা কোনো কারণে ইনফেকশন হলে, গলা ব্যথা থাকলে, শ্বাসনালীর প্রদাহ, পেট ফুলাভাব, ডায়াপার র্যাশ ও কোনো ক্ষত বা আঘাত পেলে কান্না করতে পারে শিশু।
শিশু অতিরিক্ত কান্না করলে প্রতিকার: বয়স অনুযায়ী শিশুর অতিরিক্ত কান্নায় কিছু পার্থক্য থাকতে পারে। এ জন্য যারা কথা বলতে পারে না, তাদের দিকে একটু বেশিই নজর দিতে হবে অভিভাবকদের। শিশু কান্না করলে বোঝতে হবে সে ক্ষুধার্ত কিনা বা ভেজা অবস্থায় রয়েছে কিনা। ঘুমের জন্য কান্না করছে কিনা। গায়ে জ্বর আছে কিনা। কান লাল হয়েছে কিনা, কান ব্যথা করছে কিনা বা পুঁজ পড়ে কিনা তা দেখতে হবে অভিভাবকদের।
শিশুর যদি ফাংশনাল কোনো কারণ না থাকে তাহলে তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত খেয়াল করে দেখতে হবে। খাবার খেতে বা গিলতে সমস্যা হয় কিনা। যদি খাবার খাওয়ার সময় কান্না করে তাহলে গলা ব্যথা করে তার। আবার ঘুম ঘুম ভাব থাকলে, ল্যাথার্জিক হলেও চিন্তার কারণ। জোরে জোরে শ্বাস নেয় কিনা খেয়াল রাখতে হবে। ডায়াপার পরলে অনেক শিশুর ডায়াপারের জায়গাগুলোয় ঘা বা র্যাশ হয়। এ কারণেও কান্না করে। শরীরের কোনো জায়গা ফুলে থাকলে বা রক্তক্ষরণের চিহ্ন আছে কিনা, সেটিও দেখতে পারেন।
শিশুর মধ্যে যদি এসব সমস্যা থাকে তাহলে সমাধান করা জরুরি। এ জন্য অতিরিক্ত কান্নার কারণ খুঁজতে হবে। তা না হলে শিশু কান্না করেই যাবে। শারীরিক কোনো অসুস্থতা না থাকলে শিশুকে অবশ্যই কোনো শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে।