টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সড়ক ১৮ ফুট থেকে ৪০ ফুট প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এর মধ্যে মধুপুর থেকে রসুলপুর পর্যন্ত হচ্ছে ১৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করনের কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। কিন্তু মধুপুর উপজেলার ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় বন বিভাগ।
বনবিভাগের দাবি, যেখানে সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে, সেই জায়গাটা বন বিভাগের। তাই তারা তাদের জায়গা দিয়ে সড়ক তৈরি করতে দেবে না।
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যানজট নিরসনে বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক প্রশস্তকরনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এরমধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ কিলোমিটার বাড়িয়ে ৪৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নিতকরনের কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালের জুন মাসে। মধুপুর থেকে রসুলপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৪২ কোটি টাকা।
সড়ক বিভাগ জানায়, মধুপুর-ময়মনসিংহ ৪৫ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ৭০ ফুট করে নিজস্ব জায়গা রয়েছে। আর এই জায়গা ১৯৪১ সালে অধিগ্রহণ করে নেওয়া হয়েছে। যার সব কাজপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই বন বিভাগ ওই সড়কের উন্নিতকরণের কাজে বাধা দেয়। তারা জানায়, এই জায়গা তাদের। তাই তাদের জায়গায় কোনো সড়কের কাজ করতে দেবে না। এ পরিস্থিতিতে বর্তমানে সড়ক উন্নিতকরণের কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
তাহের ব্রাদার্স লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মিজানুর রজমান বলেন, ‘আমরা মধুপুর থেকে রসুলপুর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ পেয়েছি। এরমধ্যে আট কিলোমিটার সড়কের কাজ প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে। আর পুরো সড়কের এই কাজ দুই বছর মেয়াদের কারণে ২০২৪ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই জলছত্র থেকে রসুলপুর পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ করতে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা বাধা দেন। রাষ্ট্রীয় কাজ করতে গিয়ে যদি রাষ্ট্রেরই কোনো বিভাগ বাধা দেয়, তাহলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নও চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।’
মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘এই সড়কের দুই পাশে ৭০ ফুট করে জায়গা সড়ক বিভাগের নিজস্ব রয়েছে। তাদের সীমানা পিলারও রয়েছে সেখানে। তারপরও কেন কিভাবে বন বিভাগ বাধা দিচ্ছে, তা জানি না।’
টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল হোসেন বলেন, ‘মধুপুরে থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার সড়কের পাশে ৭০ ফুট করে নিজস্ব জায়গা রয়েছে তাদের। যা ১৯৪১ সালে অধিগ্রহণ করে নেওয়া হয়েছে। এর সব কাজপত্র রয়েছে। এছাড়া, সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই প্রকল্প পাস করা হয়। সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতেই বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কগুলোর উন্নিতকরণের কাজ শুরু করা হয়েছে।’
আলিউল হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্রের উন্নয়নে কোনো রাষ্ট্রীয় দপ্তর বাধা দেয়, এটা বোধগাম্য নয়। আর এই সড়কের কাজ দ্রুত সময়ে শেষ করতে না পারলে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকা এই ৭ কিলোমিটার সড়কের জন্য বাকি ৪০ কিলোমিটার সড়ক কোনো কাজেই আসবে না। এতে করে এই রুটে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল বিভাগী বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, ‘এই সড়কটি ব্রিটিশ আমলে করা হয়েছে। ওই সময় আমি এখানে ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। তবে এটি বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকা। এখানে সড়ক বিভাগের কোনো জায়গা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এই সড়কের কাজে বাধা দিয়েই যাবো।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/