চিংড়িতে লোকসান, কাঁকড়ায় ঝুঁকছেন চাষিরা


জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট , : 08-01-2023

চিংড়িতে লোকসান, কাঁকড়ায় ঝুঁকছেন চাষিরা

একসময়ে বাগেরহাটের অর্থের চালিকাশক্তি ছিল সাদাসোনা খ্যাত বাগদা ও গলদা চিংড়ি। আর এই চিংড়িতে রোগ-বালাই লেগে থাকায় পেশা পরিবর্তন করছেন চাষিরা। এ ছাড়াও বিদেশি বাজারে চিংড়ির চাহিদা কম থাকায় কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। কয়েক বছরে গলদা চিংড়ির দাম কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। চাষিরা বলছেন, চিংড়িতে রোগ-বালাই বেশি হওয়ায় লোকসান হয়, তাই কাঁকড়া চাষ বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁকড়া চাষ বাড়াতে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। 

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাঁকড়ার রোগবালাই কম, মৃত্যুহার কম ও দাম বেশি হওয়ায় কাকড়া চাষে ঝুকছেন চাষিরা। বাগেরহাটে সাধারণত কাঁকড়ার দুই ধরনের চাষ হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে পুরুষ কিশোর কাঁকড়া (ছোট কাকড়া) ছেড়ে বড় করে বিক্রি করা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক (প্রি ম্যাচিউরড) মা কাঁকড়া ঘেরে ছেড়ে পূর্ণ বয়স্ক (পেটে বেশি ডিম হওয়ার পরে) করে বিক্রি করা। চাষিরা বক্স পদ্ধতি ও ঘেরে পাটা দিয়ে দুই পদ্ধতিতেই কাঁকড়ার চাষ করে থাকেন।

২০১৫ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কাকড়ার ঘের গড়ে উঠেছে। অনেকে বাগদার ঘেরে কাঁকড়ার চাষ শুরু করেছেন। এর মধ্যে রামপাল উপজেলায় সব থেকে বেশি কাঁকড়ার চাষ হয়ে থাকে। এ উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৫০০ চাষি কাঁকড়া চাষ করছেন। কাঁকড়াকে সাধারণত স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত পুটি মাছ, তেলাপিয়া মাছ ও কিছু কম দামের সামুদ্রিক মাছ খাওয়ানো হয়ে থাকে।

রামপাল উপজেলার গিলাতলা ইউনিয়নের বাশতলী গ্রামের কাঁকড়া চাষি ভোজন ভান্ডারী বলেন, ‘প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বাগদা-গলদার চাষ করতাম। ভাইরাসে বাগদায় মড়ক ও গলদার দাম কমে যাওয়ায় বিভিন্ন সময় অনেক লোকসানে পড়েছি। পরে উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শে ৪ বছর আগে নিজের জমিতে কাঁকড়া চাষ শুরু করি। ২৪ শতাংশ জমিতে কাঁকড়া চাষ করে প্রতি বছর ৩ থেকে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা আয় করি। এ জমিতে আমি বছরে ৮টি সার্কেল চাষ করি।’ 

রামপাল উপজেলার কাঁকড়া চাষি জাহিদুর রহমান বলেন, ‘বাগদার চাষ করে বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হয়, কখন ভাইরাসে আক্রমণ করে। কিন্তু কাঁকড়া চাষে এ ধরনের তেমন কোনো ঝুকি নেই। তাই ২০১৫ সালে কাঁকড়া চাষ শুরু করি। নিজের এক একর জমিতে দুই সার্কেল কাঁকড়া চাষ করে বছরে ভালো লাভ হচ্ছে।’


রামপাল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে কাঁকড়ার দাম অনেক বেশি। ২০০ গ্রাম ওজনের স্ত্রী কাঁকড়ার কেজি প্রায় ২৪০০ থেকে ২৬০০ টাকা বিক্রি করা যায়। কৃষকরা অল্প পুঁজিতে অনেক বেশি লাভ করতে পারে কাঁকড়া চাষ করে। এ জন্য রামপাল উপজেলায় অনেকেই কাঁকড়া চাষে ঝুকছেন। কাঁকড়া চাষকে উৎসাহ যোগাতে উপজেলা মৎস্য অফিসের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় এদেরকে কাঁকড়ার পোনা ও খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া আমরা চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম রাসেল বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাগদা চিংড়িতে রোগ বালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাগদা চাষে অনেক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়া বহির্বিশ্বে বড় গলদা চিংড়ির দাম কমায় গলদা চাষিরাও লোকসানে পড়ছেন। যার ফলে বাগেরহাটে অনেক চাষি বাণিজ্যিকভাবে কাকড়া চাষ শুরু করেছেন। ২০১৫ সালে কুচিয়া ও কাঁকড়া চাষ ও গবেষণা প্রকল্পের আওতায় চিংড়ির পাশাপাশি চাষিদের কাঁকড়া চাষে উদ্বুদ্ধ করা শুরু হয়েছে। প্রকল্পের সহযোগিতায় প্রদর্শনী খামার, কাঁকড়া চাষ বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাঁকড়া চাষ লাভজনক। কারণ রোগ বালাইয়ে কাঁকড়ার মৃত্যু হার কম, স্বল্প পুঁজিতে চাষের সুবিধা এবং চিংড়ির তুলনায় দাম বেশি। বর্তমানে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কাঁকড়া ঘের গড়ে উঠেছে।’

কাঁকড়া চাষের কিছু ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাঁকড়ার পোনার জন্য প্রাকৃতিক উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়। সুন্দরবন থেকে পোনা সংগ্রহ করে চাষ করা হয়। তবে চাহিদা অনুযায়ী সবসময় চাষিরা পোনা পান না। এ ছাড়াও বর্তমানে কাঁকড়ার কিছু রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। আমরা কাঁকড়া নিয়ে গবেষণা করছি। চেষ্টা করছি এসব রোগ বালাইয়ের কারণ জানতে এবং রোগ বালাইয়ের ওষুধ আবিষ্কার করতে।’

ঢাকা বিজনেস/এম


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যাসোসিয়েটস (সি-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১৫১১৯৪৪৪,
ইমেইল: [email protected]