আজ মহানায়কের জন্মদিন


বিনোদন ডেস্ক , : 03-09-2023

আজ মহানায়কের জন্মদিন

বাঙালির মননে ও আবেগে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছেন মহানায়ক উত্তমকুমার। একসময় বাংলা ছবির দুনিয়ায় রাজত্ব করেছেন। বলা ভালো, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন উত্তমকুমার। তাই মৃত্যুর ৪৩ বছর পরও টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি বর্তমান।

আজ উত্তমকুমারের জন্মদিন। নানা মাধ্যমে এই মহানায়ককে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ভক্ত-অনুরাগীরা। ১৯২৬ সালের আজকের এদিনে কলকাতার ভবানীপুরে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তি। তার আসল নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। সিনেমায় এসে নাম পাল্টে রাখেন উত্তমকুমার। শিক্ষাজীবন শেষ না করেই কলকাতা পোর্টে কেরানির চাকরি শুরু করেন সংসারের হাল ধরতে। কিন্তু অভিনয়ের পোকাটা থেকেই গিয়েছিল মাথায়।

নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠার রাস্তায় কতটা বাধা পেরোতে হয়েছিল উত্তমকুমারকে, তার সম্যক ধারণা হয়তো অনেকেই করতে পারবেন না। প্রথম জীবনে কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে কেরানির চাকরি করতেন। কেননা তাকেই পুরো সংসার চালাতে হতো। চাকরির পাশাপাশি উত্তম ‘সুহৃদ সমাজ’ নাট্যগোষ্ঠীতে অভিনয়ও করতেন। এটি ছিল তার পারিবারিক নাটকের গ্রুপ।

নীতীন বসুর ‘মায়াডোর’ নাটকে অভিনয়ের পর তারই পরিচালনায় ১৯৪৮ সালে ‘দৃষ্টিদান’ ছবিতে প্রথম হাজির হন উত্তম। ক্যামেরার সামনে সেটাই তার প্রথম কাজ। উল্লেখ্য, প্রথম ছবি দৃষ্টিদানের টাইটেল কার্ডে উত্তমকুমারের নামই ছিল না। দৃষ্টিদান থেকে সঞ্জীবনী পরপর ৭টি ছবি ফ্লপ হওয়ার পর অভিনয়ই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন উত্তম।

দৃষ্টিদানের নায়ক ছিলেন অসিতবরণ মুখোপাধ্যায়। তার ছোটবেলার চরিত্রে ছিলেন উত্তম। দ্বিতীয় ছবি ‘কামনা’য় (১৯৪৯) প্রথম দেখা গেল তার নাম উত্তম চ্যাটার্জি। হলে ছবিটি একেবারেই চলেনি। তাই পরের ছবি ‘মর্যাদা’য় নাম বদলে ফেললেন। হলেন ‘অরূপকুমার’। তাতেও খুব একটা লাভ হলো না। ছবি চলল না। পরের ছবিতে আবারও ফিরলেন উত্তম চ্যাটার্জি হয়ে। ‘সহযাত্রী’তে (১৯৫১) এসে হলেন উত্তমকুমার। এরপর আর নাম না বদলালেও সাফল্য আসতে সময় লেগেছিল আরও কিছুদিন।

ওই সময় ‘ফ্লপমাস্টার জেনারেল’ বলেই বিদ্রুপ করা হতো তাকে। কারণ তার অভিনীত প্রথম ৭টি ছবি ব্যবসায়িকভাবে আলোর মুখ দেখেনি। চরম ব্যর্থতার সিলমোহর তখন নায়কের গায়ে। প্রতিদিন ব্যঙ্গবিদ্রুপের শিকার হতে হতে একপর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। অভিনয়ও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন।

উত্তমকুমারকে সেই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করেন পরিচালক নির্মল দে। ১৯৫২ সালে মুক্তি পায় নির্মল দে পরিচালিত ছবি ‘বসু পরিবার’। শ্রেষ্ঠাংশে উত্তম কুমার। মহানায়কের জীবনে এ ছবিটি এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কারণ এ ছবির মাধ্যমেই শুরু হয় তার নতুন অধ্যায়। তৈরি হয় পায়ের নিচে সাফল্যের প্রথম সিঁড়িটা।

এ ছবির সাফল্যের পর নির্মল দে তার পরের দুটি ছবিতেও উত্তমকুমারকে নিয়েছিলেন। একটি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ (১৯৫৩); যেখানে উত্তম-সুচিত্রা জুটিকে প্রথম পাওয়া যায়। আর অন্যটি ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’ (১৯৫৪)। এতে গ্রাম্য যুবকের চরিত্রে জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনয় করেছেন উত্তম। এর পরই মূলত বাংলা চলচ্চিত্রে প্রকৃত অর্থেই শুরু হয় ‘উত্তম যুগ’।

পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ‘হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘সাগরিকা’র মতো কালজয়ী সব ছবির পরিচিত ও আকাঙ্ক্ষিত মুখ হয়ে ওঠেন উত্তম।

সমসাময়িক প্রায় সব নায়িকাই উত্তমের বিপরীতে কাজ করেছেন। তবে সুচিত্রা সেনের নামটি উত্তমের সঙ্গে মিশে আছে কালজয়ী জুটি হিসেবে। এছাড়া তনুজা, সুপ্রিয়া দেবী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মাধবী মুখোপাধ্যায়, লিলি চক্রবর্তী, শকুন্তলা বড়ুয়া ও শর্মিলা ঠাকুররা উত্তমকে পেয়েছেন নায়ক হিসেবে।

উত্তমকুমার শুধু যে বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন তা কিন্তু নয়। বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’, ‘আনন্দ আশ্রম’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

এরপর সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘নায়ক’ ও ‘চিড়িয়াখানা’য় উত্তমকুমার নিজেকে তুলে ধরেছেন অনন্যভাবে। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই চিরবিদায় নেওয়ার পরও বাংলার মানুষের মনে থেকে গেছেন মহানায়ক হয়েই। যত দিন বাংলা সিনেমা থাকবে, তার নাম থাকবে অমর হয়ে।

ঢাকা বিজনেস/এন


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যাসোসিয়েটস (সি-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১৫১১৯৪৪৪,
ইমেইল: [email protected]