বাজারে পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সব নিত্যপণ্যের দাম নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, দাম কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না। এতে সবার মনে তীব্র ক্ষোভ জন্ম নিচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিতে কমেছে ৪০ টাকা। এখন ১৬০ টাকায় খুচরা বাজারে কেনা যাচ্ছে কাঁচামরিচ। বড় ইলিশ মাছের দামও কেজিতে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বড় ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ১৪০০ টাকা। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাওরান বাজার, কৃষি মার্কেট ও আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২৪০ টাকা থেকে ভালো মানের আদার দাম ২৮০ টাকা হয়েছে। ৯০ টাকা পেঁয়াজের দাম। নতুন করে গরম আলুর বাজার। ৪৫ টাকার নিচে আলু বিক্রি হচ্ছে না। ভারতীয় রসুনের দাম ২৮০ টাকা, দেশি রসুন ভালো মানের ২৬০ টাকা। একটু নিম্নমানের ২৪০ টাকা।
বাজারে একটু ভালোর মানের মধ্যে কম দামি চাল পাইজাম। প্রতিকেজি ৫৫ টাকা। ২৮ চাল ৬০ টাকা, মিনিকেটের দাম শুরু হয়েছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। মশুর ডাল মোটাটা ১০০ এবং চিকনটার দাম ১৩০ টাকা।
কাঁচাবাজারে সবচেয়ে কমদামি সবজি হচ্ছে পেঁপে। কেজিপ্রতি দাম ৪০ টাকা। আর ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। পটল ৬০, ঢেঁড়স ৬০, শসা ৬০, কচুমুখী ৮০, উচ্ছে ৯০, লাউ ৭০, জালি কুমড়া ৬০, পাকা টমেটো ১৩০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমেছে, এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। শুকনা মরিচ ৪২০ টাকা। বেগুনের দামও ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেজি বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০ টাকা।
সবচেয়ে কম দাম লেবুর। হালি ২০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা। শাকের মধ্যে পুইশাক আঁটি ৩০, লাল শাক ২৫ এবং মুলাশাক ১৫ টাকা।
মাছের বাজার রীতিমতো অস্থির। তবে, ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে। গরিবের ইলিশখ্যাত পাঙ্গাস ২০০-২২০, ছোট ইলিশ ৫৫০, মাঝারি সাইজেরটা ১১০০ এবং বড়টার দাম ছিল ১৮০০ টাকা, এখন সেটি ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাগদা চিংড়ি ৭০০, গলদা চিংড়ি ১০০০, শিং ৪৫০, মাগুর ৪৫০, পাবদা ৪৫০, রুই ৩৮০ এবং কৈ মাছ সর্বনিম্ন ২৭০ টাকা। টেংরা ছোটটার দাম ৬০০ এবং বড়টা ১১০০ টাকা। ছোট বেলে ৮০০, কাতল ৩৫০।
মাংসের বাজারও নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের বাইরে বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। গরুর মাংস ৭৮০, খাসির মাংসের দাম ১১০০ টাকা, ক্রেতা নেহায়েত নাছোড়বান্দা হলে ৫০ টাকা কমাতে রাজি বিক্রেতা। লেয়ার মুরগি ৩৪০, পাকিস্তানি ৩২০, ব্রয়লার ১৮০ টাকা। ডিমের বাজার স্থির। হাসের ডিমের হালি ৭৫ এবং মুরগির ডিমের হালি ৫০ টাকা।
জিরা ১১০০, ধনে ২২০, এলাচি, ১৯৫০ থেকে ২৫০০, কিসমিস ৪২০, দারুচিনি ৪৩০, লবঙ্গ ১৫২০, চিনি ১৪০, কালোজিরা ২৮০ টাকা।
তবে, সয়াবিনের দাম কিছুটা কমছে। বোতলজাত সয়াবিন ১৬৪, সয়াবিন (খোলা) ১৪০-১৫৪ টাকা। খোলা মুড়ি ৮০, চিড়া ৭০ থেকে ৮০ খোলা। আখের গুড় ১৪০ টাকা। লাল চিড়া ৮০ টাকা।
বিএনপি বাজারের বাসিন্দা সোমা রানি। এই গৃহিণী প্রায় বাজার করতে আসেন। তিনি ঢাকা বিজনেসকে বলেন, ‘সবজির দাম কমছে না। আমি একটি ট্রেইলারের দোকানে কাজ করি। কম টাকা বেতন দিয়ে চাল, ডাল, সবজি একসঙ্গে কিনতে পারি না। প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি। যে যার মতো করে বিক্রি করছেন।’
কৃষি মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আলামিন বলেন, ‘আড়তে দাম বেশি। বাড়তি দামে কিনে, বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। কাঁচাসবজির দাম কখনোই স্থির থাকে না। একই দাম দিয়ে সবসময় কিনতে পারি না।’
আড়তদার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী কম দামে কোনো কিছু আমদানি করতে পারছি না। ডলারের সংকটে এলসি খুলতে পারছি না। ভারত থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ, রসুন, আদা কিনতে হচ্ছে। তবে, আড়তে রসুনের দাম কিছুটা কমের দিকে। ১৭০ টাকায়ও রসুন বিক্রি হচ্ছে। তবে, দেশি ভালো ২২০ টাকা। খোলা বাজারে কেন বেশি, সেটা জানি না।’
সবজির আড়তদার আলমগীর মিয়া বলেন, ‘এখন মৌসুমি সবজির দাম কিছুটা কম। কিন্তু অন্য মৌসুমের সবজির দাম বেশি। ধরেন টমেটোর দাম কিন্তু অনেক বেশি এখন। কাঁচামরিচের দাম কেজিতে পাইকারি ৪০ টাকা কমেছে। ১২০-১৩০ টাকা বিক্রি হয়েছে সকালে।’
ইলিশের দাম কিছুটা কমছে জানিয়ে মাছ ব্যবসায়ী সাগর মিয়া বলেন, ‘ছোট ইলিশ এখন ৫০০ টাকায়ও পাওয়া যায়। বড়টা কেজিতে ৩০০-৩৫০ টাকা কমেছে। ১৪০০ টাকায় বড় ইলিশ পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে এটা ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সামনে আরও কমতে পারে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/