কক্সবাজারে ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি


তাফহীমুল আনাম, কক্সবাজার , : 08-08-2023

কক্সবাজারে ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি

অতিবৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া ও ঈদগাঁওয়ে ১৫ ইউনিয়নের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে চকরিয়া উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ ও ঈদগাঁও উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। 

আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র দাশ জানিয়েছেন, রোববার (৬ আগস্ট) বিকাল ৩টা থেকে সোমবার (৭ আগস্ট) বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮১ মিলিমিটার। আরও ৩ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। ১০ আগস্ট পর্যন্ত এ বৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি।

সোমবার ঢলে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীতে ভেসে যান এক যুবক। ২ ঘণ্টা পর ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। সেইসঙ্গে রয়েছে সাগর উত্তাল।

চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে রশিদ নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ বিকাল ৩টার দিকে নদীর লক্ষ্যরচর মোহনা থেকে উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, পাবর্ত্য জেলা ও চকরিয়ার পাহাড়ি ঢল নেমে আসার মাধ্যম মাতামুহুরী নদী। পাহাড়ি ঢল, বৃষ্টি এবং জোয়ারের ঢেউয়ে বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। চকরিয়ার একটি পৌরসভা ও ১৮টি ইউনিয়নের মধ্যে পৌরসভাসহ ১২ ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এরমধ্যে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে কাকড়া, লক্ষ্যরচর, বুমুবিল ছড়ি, সুরেজপুর-মানিকপুর, কৈয়ারবিল, কোনাখালী ইউনিয়ন। তবে পানি ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, ‘১২ ইউনিয়নের ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরী নদীতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্লাবিত এলাকার লোকজনকে সরকারি সহায়তা প্রদান শুরু করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হচ্ছে।’

এদিকে ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও, জালালাবাদ ও পোকখালী ইউনিয়নের ৭০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ঈদগাঁও নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে।

জালালাবাদ ইউসনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদ বলেন, ‘বেড়িবাঁধ ভেঙে এই তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার প্লাবিত হওয়া অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত সংস্কার করা না হলে এটি আরও বড় আকারে হতে পারে।’

এদিকে, সামুদ্রিক জোয়ারের ঢেউয়ে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মেরিন ড্রাইভের কিছু অংশে জিওব্যাগে বালির বাঁধ তৈরি করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও নতুন করে আরও কয়েকটি স্পটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. শাহীন ইমরান বলেন, ‘চকরিয়া পেকুয়ায় অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। মহেশখালী, চকরিয়া, সদর, টেকনাফ ও উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা মাইকিং করে। ওসব এলাকায় ইতোমধ্যে মাইকিং শুরু হয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। তারপরেও না নামলে তাদের যে-কোনোভাবে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হবে।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘পর্যাপ্ত শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় এসব খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।’

শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘উখিয়া টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যে যেসব ক্যাম্পেগুলো পাহাড়ের ওপরে ও পাদদেশে রয়েছে, সেসব এলাকার রোহিঙ্গাদের অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। যেসব এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে, সেসব এলাকার রোহিঙ্গাদের পুরোপুরি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।’

ঢাকা বিজনেস/এইচ


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যারিস্টোক্র্যাটস (লেভেল-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৩২৯৬৮১৬২৫,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com