টাঙ্গাইলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ। এরই মেধ্যে জেলার টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, ঘাটাইলসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় অন্তত এক হাজার গরুর মধ্যে এই রোগ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় পঞ্চাশটি গরু মারা গেছে। এতে বিপাকে পড়েছে জেলার কৃষকরা।
প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞ, খামারি ও সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত গ্রীষ্মের শেষ ও বর্ষার শুরুতে মশা-মাছির বিস্তারের সময় ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। মশা-মাছি ও খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এই রোগ ছড়ায়। এই রোগে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় চিকিৎসা করতে হয় উপসর্গ দেখে। এতে সঠিক চিকিৎসা পেতে বেগ পেতে হয়। এছাড়া আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে আলাদা করে মশারির ভেতরে রাখতে হয়।
লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণগুলো হলো, গরুর গা হঠাৎ গরম হয়ে যাওয়া, শরীরজুড়ে ছোট ছোট মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠা, চামড়া উঠে শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া এবং এ রোগে আক্রান্ত গরুর খাবার খাওয়া ছেড়ে দেওয়া।
সরেজমিনে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, সদর ও গোপালপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষকের গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের বাসেদ বলেন, ‘নিজের কোনো জমি নাই। তাই অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করি। বাড়তি আয়ের আশায় গরু পালন করি। চারটি গরু সম্বল। গত ১৫ দিন আগে চারটি গরুই লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসা শুরুর কয়েক দিন পর মারা যায় গরুগুলো।’
একই অবস্থা বাসেদের ভাই কুরবান আলীরও। তিনিও কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন। তারও দুটি গরু মারা যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সহায়তা চান তারা। এছাড়া তাদের বাড়ি পাশে আরও ৬টি গরু মারা গেছে। সব মিলিয়ে তাদের ৫ বাড়ির ১২টি গরু মার গেছে।
একই গ্রামের হালিমা ও নাসিমা বলেন, ‘হঠাৎ করেই গরুর শরীর গরম হয়। তারপর গোটা ওঠে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। সপ্তাহ খানেক চিকিৎসা করার পরেই মারা যায়।’
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা বলেন, তাদের অনেকেরই সম্বল বলতে এই গরু। লাম্পি স্কিন ডিজিজে তাদের এ সম্বল মারা যাওয়ায় তারা বেশ বেকায়দায় পরেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা দাবি করেছেন।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা রানা মিয়া বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এই মুহূর্তে সহযোগিতার সুযোগ নেই।’
ঢাকা বিজনেস/এনই