উজানের ঢল-টানা বর্ষণে ডুবলো লালমনিরহাটের ৫ উপজেলা


ফারুক আলম, লালমনিরহাট , : 20-06-2023

উজানের ঢল-টানা বর্ষণে ডুবলো লালমনিরহাটের ৫ উপজেলা

হঠাৎ ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ছোটবড় ১৭ নদীর পানি বাড়ছে। সঙ্গে  ৫ দিনের টানা ভারী বর্ষণে ভাসছে লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলা। উপজেলাগুলো হলো লালমনিরহাট সদর, কালিগঞ্জ, পাটগ্রাম, আদিতমারী ও হাতিবান্ধা। ফলে এসব জনপদের বাসিন্দারা পড়েছেন চরম বিপাকে। তারা বলছেন, মানুষের পাশাপাশি খাবার সংকটে ঝুঁকিতে রয়েছে গবাদি পশুপাখিও।

ঈদকে সামনে রেখে নতুন সমস্যায় পড়ছেন গৃহস্থ ও খামারিরা। বাজারে পশুখাদ্যের মূল্য বাড়ার পাশাপাশি উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় গোখাদ্য-সংকটও। পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে চাষের ঘাস। এমন অবস্থায় কৃষক ও খামারিরা কোরবানির হাটে পশু বিক্রির করে ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। 

টানা ভারীবর্ষণ ও উজানের ঢলের কারণে যেসব অঞ্চল ডুবে গেছে লালমনিরহাটের লালমনিরহাট সদরের খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা,মোগলহাট, কুলাঘাটের,বড়বাড়ি। কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার,কাকিনা ভোটমারী। পাটগ্রামের শ্রীরামপুর,পাটগ্রাম, বুড়িমারী, দহগ্রাম, জগৎবেড় ও বাউরা। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, দুর্গাপুর। হাতিবান্ধার ডাউয়াবাড়ি, সিন্দুর্না, গড্ডিমারী, বড়খাতা, সিংগিমারী, পাটিকাপাড়া ইউনিয়নগুলো নদী লাগোয়া। এসব ইউনিয়নে বন্যার আঘাত দ্রুত ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড-সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৭ জুন) থেকে পানিপ্রবাহ বাড়তে থাকে। সেদিন থেকে তিস্তা-ধরলায় বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সময় গড়িয়ে বাড়তে বাড়তে ১৯ জুন (সোমবার) সকাল ৬টায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। বর্তমানে ১৭ সেন্টিমিটারের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলার বাসিন্দা জাহেদা বেগম বলেন, ‘রান্না করার সময় হঠাৎ বাড়িঘর তলিয়ে যায়। ঘরের কোনো কিছুই সরাতে পারিনি। খুব কষ্টে আছি।’

আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখি পানিতে সব তলিয়ে গেছে। বাদাম-ভুট্টা নষ্ট হয়েছে। গরুছাগল,বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে হঠাৎ বিপদে পড়েছি।’

মাহ্বুবুর রহমান বলেন, ‘এবার পানি না হওয়ায় অনেকের ফসলই ক্ষেতে ছিল। একরাতে উজানের পানি ও ভারীবর্ষণের কারণে সব কিছু তলিয়ে গেছে। দেরিতে লাগানো ভুট্টা, বাদাম, পাট ডুবে গেছে।’

কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সৈয়দা সিফাদ জাহান বলেন, ‘কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যে ফসল তলিয়ে গেছে,পানি নেমে যাওয়ার পরে সেই ফসলের ক্ষতির একটি পার্সেনটেজ আছে। কতটুকু এলাকা তলিয়ে গেছে,তার তথ্য সংগ্রহ করে ঢাকায় কন্ট্রোল রুমে পাঠানো হয়েছে। তলিয়ে যাওয়া ফসলের  কত পার্সেন্ট ক্ষতি হয়েছে, সে তথ্য পানি নেমে যাওয়ার পরে সংগ্রহ করা হবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন,‘আমি টিমসহ বন্যা কবলিত এলাকায় আছি। ৫ উপজেলার স্টাফরা কাজ করছেন। হঠাৎ বন্যায় আমরা বিব্রত। এখন কোনো রোগবালাই হচ্ছে না। রোগব্যাধি হলেও ৪/৫দিন পর হতে পারে। তাই ভ্যাকসিন করছি। ওষুধসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের পানিপরিমাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ  ও পানির চাপ সামাল দিতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪ জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে। অন্যান্য বার কিছু জলকপাট নষ্ট বা বন্ধ থাকলেও এবার সবকটি জলকপাট সচল আছে।’  

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নদীভাঙন কবলিত এলাকা চিহ্নিত করা হয়নি। আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। যেখানে ভাঙন, সেখানেই কাজ করছেন।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, ‘উপজেলাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে। এই বিষয়ে কাজ চলছে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই


উপদেষ্টা সম্পাদক: সামছুল আলম
সম্পাদক:  উদয় হাকিম
প্রকাশক: লোকমান হোসেন আকাশ



কার্যালয়: বসতি অ্যাসোসিয়েটস (সি-৩), প্লট- ০৬,
ব্লক- এস ডব্লিউ (এইচ), গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৭১৫১১৯৪৪৪,
ইমেইল: dhakabusines@gmail.com