অপেক্ষার পালা শেষ। উদ্বোধন হয়েছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। এরই মধ্যদিয়ে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। ইতিহাসে লেখা হয়ে থাকবে এই দিনটি। দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প মেট্রোরেল আজ বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে রাজধানীর দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ বেলা ১১টায় উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের সি-১ ব্লকের খেলার মাঠে মেট্রোরেল উদ্বোধনের জন্য উপস্থিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোয়া ১১টায় উদ্বোধনী ফলকের প্রতিরূপ জনসম্মুখে উন্মোচন করেন তিনি।
প্রথম ধাপে চলবে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথ। এই পথে একবার চলতে মেট্রোরেল সময় নেবে ২০ মিনিট। তবে পূর্ণমাত্রায় চালু হলে এই সময় কমে আসবে ১৬–১৭ মিনিটে। মেট্রোরেলে চড়ার আগে অবশ্যই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।
সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছে ২০ টাকা৷ আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা৷ প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা৷ উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া একই-২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন (উত্তরা উত্তর) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে৷
ইতোমধ্যে গন্তব্যে ছুটতে প্রস্তুত লাল-সবুজের মেট্রোরেল। অপেক্ষা চাকা ঘোরার। দেশের প্রথম সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত গণপরিবহন এই স্বপ্নবাহন। একেবারেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে ট্রেন। টিকিট ব্যবস্থাও পুরোপুরি কম্পিউটারাইজড। উদ্বোধনের পরের দিন বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী নিয়ে ছুটবে ট্রেন।
দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চলবে যাত্রী ব্যবস্থাপনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যাত্রী চলাচলে থাকবে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। এই ট্রেন চালুর মধ্য দিয়ে কমবে পথের ভোগান্তি, বাঁচবে সময়। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিয়াবাড়ী থেকে ট্রেনে উঠে আগারগাঁও আসবেন ২০০ জন।
মেট্রোরেল পরিচালনায় দায়িত্বরতদের সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাত্রী সহযোগিতায় থাকবে পৃথক লোকজন। স্টেশন থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্মসহ সংযোগ সড়কের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ শেষ হয়েছে। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সসহ (এসএসএফ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
উল্লেখ্য, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে ৯টি স্টেশন রয়েছে। স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ী), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। উদ্বোধনী দিনে শুরু ও শেষের স্টেশন খুলে দেওয়া হবে। স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় টিকিট কাউন্টার। তিন তলায় প্ল্যাটফরম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরা ওই তলায় যেতে পারবেন। মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি কোচ। এতে ৫৪ জন বসতে পারবেন। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। নারীদের জন্য আলাদা কোচ রয়েছে। আবার তারা চাইলে সবার সঙ্গে শেয়ারও করে যেতে পারেন। ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালে মূল কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে।
ঢাকা বিজনেস/এম